অর্থ খরচ করার মতো ক্যাপাসিটি জাতীয় জাদুঘরের নেই: মহাপরিচালক

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গণশুনানি অনুষ্ঠানে বক্তারা ছবি প্রথম আলো
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গণশুনানি অনুষ্ঠানে বক্তারা ছবি প্রথম আলো

২০০৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় জাদুঘরের জন্য ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এ পরিমাণ অর্থ সঠিকভাবে খরচ করার জন্য জাতীয় জাদুঘরে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল নেই—এমনটাই বললেন স্বয়ং মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ। তাঁর ভাষায়, ‘জাদুঘরের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। অর্থের সংকট রয়েছে আমাদের। তবে সত্যি কথা হলো, অর্থ খরচ করার মতো ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) আমাদের নেই। ট্রেইনড ম্যানপাওয়ার আমাদের নেই। সেই সমস্যা উত্তরণের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’

বুধবার জাতীয় জাদুঘরের ‘গণশুনানি: জাদুঘর পরিদর্শনে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ এ কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, সম্প্রতি জাতীয় জাদুঘর ও জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর সমন্বিত ভবন নির্মাণে কাজ শুরু করেছে। ১৩ তলা ভবনটি নির্মিত হলে জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারি ৪৫ থেকে ১০০টিতে উন্নীত করা সম্ভব। 
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এতে আমাদের কাছে আরও যেসব নিদর্শন রয়েছে, সেগুলোও আমরা প্রদর্শন করতে পারব। নতুন নতুন আরও সংগ্রহ আমরা উপস্থাপন করতে পারব।’ জাতীয় জাদুঘরে প্রতিদিন ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার দর্শনার্থী আসছে জানিয়ে রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘জ্ঞানভিত্তিক, সংস্কৃতিবান্ধব মানুষ হিসেবে শিশুদের গড়ে তুলতে হলে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে অহংবোধ তৈরি করতে হবে। তখনই তারা জাদুঘর দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।’
জাতীয় জাদুঘরের সমকালীন শিল্পকলা বিভাগের কিপার বিজয় কৃষ্ণ বণিক জানান, জাতীয় জাদুঘরে এখন প্রায় ১ লাখ নিদর্শন রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫ হাজার প্রদর্শন করছেন তাঁরা। বিজয় কৃষ্ণ বলেন,‘আমরা মনে করি, একটি রুমে গাদাগাদি করে এত ডিসপ্লে হওয়া ঠিক না। আবার এত নিদর্শনের মধ্যে যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোই আমরা প্রদর্শন করি। অনেক নিদর্শন পারিবারিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। আমাদের পরিকল্পনায় জেলা জাদুঘরের কথা রয়েছে। সেখানেও যদি সেসব নিদর্শন ডিসপ্লে করি, তাহলে শিক্ষার্থীরা তা দেখতে পাবে।’

গণশুনানিতে বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ ছবি প্রথম আলো
গণশুনানিতে বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ ছবি প্রথম আলো

সভায় এসে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘সংস্কৃতি, ইতিহাস, রাজনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে জাতি গঠনে যাঁরা বিভিন্ন সময়ে অবদান রেখেছেন, তাদের কিছু কিছু স্মৃতিচিহ্ন মিনিয়েচার স্কেলে হলেও জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত হওয়া দরকার। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যেসব সেনা এখানে জীবন দিয়েছেন, তাঁদের কথাও থাকা দরকার কৃতজ্ঞতা হিসেবে।’

বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা, কূটনীতিকেরা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় জাদুঘর সফরে আসেন। তাঁদের সামনে বাংলাদেশের ইতিহাস উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ভাষায় প্রশিক্ষিত একটি কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতেও পরামর্শ দেন তিনি। 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শিপ্রা সরকার মনে করেন, শুধু ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন প্রদর্শনে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বাড়াতে হবে গবেষণাও। শিপ্রা সরকার বলেন, “বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সময় কীভাবে বদলে গেল, এখানে সে বিষয়ে গবেষণাও হওয়া দরকার। অনেকের কাছে অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে, সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত না করে জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে আসা দরকার। লাইব্রেরিতে প্রাচীন পুঁথির অনেক কালেকশন আছে। সেগুলো যেন গবেষকেরা আরও সহজে ব্যবহার করতে পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা থাকা উচিত।’

এ ছাড়া সভায় কথা বলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ শাহরিয়ার, ছড়াকার আসলাম সানী,বেরাইদ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক লায়লা আরজুমান বানু, জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কিপার শিহাব শাহরিয়ার, প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের কিপার (চলতি দায়িত্ব) কঙ্কন কান্তি বড়ুয়া প্রমুখ। বক্তাদের মন্তব্যে উঠে এসেছে, জাদুঘর থেকে যতটুকু পেয়েছেন তাঁরা এর থেকেও বেশি প্রত্যাশা করেন। তাঁদের মতে, জাদুঘরকে আরও উন্নতি সাধনের প্রয়োজন রয়েছে। গ্যালারিতে আরও বেশি আর্টিকেল প্রদর্শনী করা, প্রদর্শনী গ্যালারিগুলো আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। বক্তাদের বিভিন্ন মতামতের ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিপাররা বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন।