বিশ্ব সংগীত দিবসে নানা ভাষার গান শিল্পকলায়

বিশ্ব সংগীত দিবস সামনে রেখে শিল্পকলা একাডেমিতে গানের মহড়ায় ব্যস্ত সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, প্রতীক ও পুতুল। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া
বিশ্ব সংগীত দিবস সামনে রেখে শিল্পকলা একাডেমিতে গানের মহড়ায় ব্যস্ত সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, প্রতীক ও পুতুল। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া

সেই ১৯৮২ সালের ২১ জুন বিশ্ব সংগীত দিবসের প্রবর্তন ফ্রান্সে। ১৯৮৫ সালের ২১ জুন গোটা ইউরোপ এবং পরবর্তী সময়ে সেটা পুরো বিশ্বে মর্যাদা লাভ করে। বিশ্বের প্রায় ১১০টি দেশ উদযাপন করত দিবসটি। বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে ঘটা করে উদযাপন করা হয় এই দিবস। এবার ঢাকায় বড় পরিসরে দিনটি উদযাপন করা হবে। মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন মিলনায়তনে দেখা গেল অনুষ্ঠান প্রস্তুতির মহাযজ্ঞ। শিল্পকলা একাডেমি সূত্র বলছে, এবার তাদের উদ্যোগে ‘সুরের আগুন ছড়িয়ে দেব সব প্রাণে’ স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব সংগীত দিবসের আয়োজন, যেখানে দেশের ৪৫ জন শিল্পী শোনাবেন ১০ দেশের গান।

মহড়ায় ব্যস্ত আরিফ, ফারশিদ, আলিফ আলাউদ্দিন ও মেহরাব। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া
মহড়ায় ব্যস্ত আরিফ, ফারশিদ, আলিফ আলাউদ্দিন ও মেহরাব। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া

এবারের আয়োজনটি তত্ত্বাবধান করছেন কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী। প্রথম আলোকে তিনি জানান, দুদিন ধরে শতাধিক শিল্পী ও যন্ত্রীর সমন্বয়ে চলছে মহড়া চলছে। নেওয়া হচ্ছে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। ২১ জুন বিকেলের এই আয়োজনে দেশের প্রায় সব শিল্পীর উপস্থিতির বিষয়টিও নিশ্চিত করা হচ্ছে। দিনাত জাহান জানান, এবারের আয়োজনে বাংলা ছাড়াও গাওয়া হবে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, স্প্যানিশ, জাপানিজ, চায়নিজ, নেপালি, আরবি ও রুশ ভাষার বিখ্যাত গান।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার মিলনায়তনে ২১ জুন বিকেল ৫টা থেকে শুরু হবে বৈচিত্র্যপূর্ণ এই গানের আসর। এর আগে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিল্পীসহ দেশের অন্য সংগীতশিল্পীদের নিয়ে একাডেমি প্রাঙ্গণে হবে একটি শোভাযাত্রা, যেখানে একাডেমির মহাপরিচালক ছাড়াও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

মহড়ার ফাঁকে জয় শাহরিয়ার, সাব্বির, পুতুল ও মুহিনের সেলফি। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া
মহড়ার ফাঁকে জয় শাহরিয়ার, সাব্বির, পুতুল ও মুহিনের সেলফি। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া

মূল পরিবেশনার শুরু হবে একটি দেশাত্মবোধক বাংলা গান দিয়ে। শুরুতে সমবেত কণ্ঠে থাকছে ‘আমারও দেশেরও মাটিরও গন্ধে’ গানটি। এতে কণ্ঠ দেবেন রাজীব, ইউসুফ, প্রিয়াঙ্কা গোপ, অনুপমা মুক্তি ও রাশেদ। আর সমাপনী গান হিসেবে থাকছে ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’। এটি গাইবেন বাদশা বুলবুল, ডলি সায়ন্তনী, মৌটুসি, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস, সবুজ, শরীফ, সুস্মিতা ও সুমি মির্জা।

অনুষ্ঠানের ভিনভাষী গানগুলো মধ্যে চায়নিজ ভাষায় গাইবেন দিনাত জাহান মুন্নী, প্রতীক হাসান ও পুতুল। ইংরেজি গান গাইবেন সাব্বির, আরমিন মূসা, জয় শাহরিয়ার ও আর্নিক। স্প্যানিশ গাইবেন আলিফ আলাউদ্দিন, সুজন আরিফ, মেহরাব ও ফারশিদ। উর্দুতে গাইবেন পুলক, পারভেজ, সিঁথি সাহা ও বেলি আফরোজ। আরবি ভাষায় গান করবেন কোনাল, রাফাত ও হৈমন্তী। অন্যদিকে নেপালি ভাষায় লুইপা, সজীব ও পিংকি ছেত্রি। রুশ ভাষার গান করবেন রন্টি, শুভ ও স্মরণ। হিন্দি গান ‘কাভি কাভি মেরে দিল মে’ গাইবেন কণা, মুহিন, ইমরান ও লিজা। আর জাপানি ভাষায় সংগীত পরিবেশন করবেন ইবরার টিপু, শান ও বিন্দু কণা। গানের পর্ব শেষ হবে আরেকটি দেশাত্মবোধক গান দিয়ে।

সম্মিলিত মহড়া। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া
সম্মিলিত মহড়া। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া

আজ বুধবার দুপুরে অনুষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোকে জানান করেন ক্লোজআপওয়ান খ্যাত সংগীতশিল্পী সাব্বির। তিনি, আরমিন মূসা, জয় ও আর্নিক মিলে ‘সামার ওয়াইন’ গানটি করবেন অনুষ্ঠানে।


সংগীত দিবসের শুরুটা হয়েছিল আশির দশকে। তবে এর আগে ফ্রান্সের একটি রেডিও স্টেশনে কর্মরত আমেরিকান সংগীতজ্ঞ জোয়েল কোয়েন প্রথম সত্তরের দশকে ফরাসি সরকারের কাছে দিনব্যাপী বিশ্ব সংগীত দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। কয়েক বছর পর ১৯৮২ সালে ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি সমীক্ষায় দেখতে পায়, সে দেশের কমপক্ষে দুটি সন্তানের মধ্যে একজন কোনো না কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারদর্শী। বিষয়টি চমকে দেয় তখনকার সংস্কৃতিমন্ত্রী জ্যাক ল্যাংকে। সেই থেকে ১৯৮৫ সালের ২১ জুন প্রথম সমগ্র ইউরোপে এবং পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বে সংগীত দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। তবে প্রথম থেকেই আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দিবসটি পালন করে আসছে। ২১ জুন উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় দিন হওয়ায় দিনটিকে সংগীত দিবস হিসেবে পালন করার জন্য বেছে নেওয়া হয়।