সৈকতে বেজে উঠল উৎসবের ঢাক

ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্সের সভা আর ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন ঊর্মিমালা সরকার (মাঝে), লুবনা মারিয়াম (বাঁয়ে) ও ইউনি ওয়াং (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্সের সভা আর ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন ঊর্মিমালা সরকার (মাঝে), লুবনা মারিয়াম (বাঁয়ে) ও ইউনি ওয়াং (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

সাগরের হাওয়ায় উড়ছিল রঙিন পতাকাগুলো। সৈকতের বালুতে প্রস্তুত ছিল মঞ্চ। মণিপুরি শিল্পীদের পুংয়ের তালে সকালবেলার জড়তা কেটে যায় একদল মানুষের। দলবল নিয়ে পুং বাজিয়ে উৎসব শুরু করেন তাঁরা। বাংলার ঢুলিরাও যোগ দেন তাঁদের সঙ্গে। বাদ যায়নি তরুণ নৃত্যশিল্পীদের সমবেত নৃত্য। ঢাক-ঢোল আর পুংয়ের বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।

আজ শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের অবকাশযাপন কেন্দ্র মারমেইড ইকো রিসোর্টে শুরু হয়েছে চার দিনের আন্তর্জাতিক দ্বিবার্ষিক-বার্ষিক নৃত্য উৎসব ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল ২০১৯’। ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স, এশিয়া প্যাসিফিকের (ডব্লিউডিএ, এপি) বাংলাদেশ শাখা নৃত্যযোগ প্রথমবারের মতো দেশে আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক এই নৃত্য উৎসব।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডব্লিউডিএ, এপির সভাপতি ঊর্মিমালা সরকার বলেন, আমাদের অনেক দিনের শ্রম ও সাধনার ফসল এই উৎসব। বাংলাদেশে বার্ষিক সভা করার পাশাপাশি এ উৎসবের আয়োজন করতে পারাটা আমাদের জন্য একাধারে আনন্দের এবং গর্বের। দূরদূরান্ত থেকে এসে আমাদের এই উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

মণিপুরি গোষ্ঠীর পুং চোলের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হয়। ছবি: সংগৃহীত
মণিপুরি গোষ্ঠীর পুং চোলের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হয়। ছবি: সংগৃহীত

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডব্লিউডিএ, এপির সহসভাপতি লুবনা মারিয়াম, সাবেক সভাপতি তাইওয়ানের ইউনি ওয়াং এবং ডব্লিউডিএ ও এপির বাংলাদেশ শাখা নৃত্যযোগের সভাপতি আনিসুল ইসলাম হিরু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা হাসান, বেলায়েত হোসেন খান, সোমা মমতাজ, মুনমুন আহমেদ, তাবাসসুম আহমেদ ও তামান্না রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুং বাজায় সিলেট থেকে আসা মণিপুরি দল, ঢোল বাজায় বাংলার ঢোল এবং নৃত্য পরিবেশন করে নাঈম খান ড্যান্স কোম্পানি।

এ বছর ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের বিষয়বস্তু ‘দূরত্বের সেতুবন্ধন’। এতে নৃত্যকলার মধ্য দিয়ে সমাজের ভেতরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দূরত্বে সেতু স্থাপনের ধারণা তুলে ধরা হবে। উৎসব উপলক্ষে ছিল খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী আকরাম খানের বক্তৃতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বড় পর্দায় চালিয়ে দেওয়া আকরাম খানের ভিডিও বক্তৃতায় দল বেঁধে অংশ নেন নৃত্যশিল্পীরা। এক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদা সুলতানা তানজী ও লতিফা ইয়াসমিন। সমসাময়িক নৃত্যের কর্মশালা পরিচালনা করেন জার্মান থেকে আসা নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষক টমাস বুঙ্গার।

নৃত্য পরিবেশন করেন নাঈম খান ড্যান্স কোম্পানির শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত
নৃত্য পরিবেশন করেন নাঈম খান ড্যান্স কোম্পানির শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

ডব্লিউডিএ, এপি-এর বার্ষিক সাধারণ সভা এ বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে। এ উপলক্ষে প্রতিদিনই রয়েছে কর্মশালা, সেমিনার ও প্রবন্ধ পাঠ। বিকেলে কক্সবাজারের লাবণী বিচ সড়কে কক্স কার্নিভ্যাল মিলনায়তনে থাকবে নৃত্য পরিবেশনা। দুই ভাগে এ পরিবেশনায় অংশ নেবেন আন্তর্জাতিকভাবে উৎসবের জন্য নির্বাচিত শিল্পী ও তাঁদের প্রযোজনা এবং জাতীয়ভাবে নির্বাচিত শিল্পীদের প্রযোজনাগুলো। ওই সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

উদ্বোধন শেষে সেলফি তুলছেন মুনমুন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
উদ্বোধন শেষে সেলফি তুলছেন মুনমুন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

উৎসবের দ্বিতীয় দিন বিকেলে অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, তৃতীয় দিন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস এবং চতুর্থ ও শেষ দিন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।