মঞ্চ থেকে মুঠোফোনে

>কনসার্টে হাজার তরুণের গর্জন শুনে যাঁদের অভ্যাস, ফেসবুকে হাজারো লাইক-কমেন্টসে কি তাঁদের মন ভরে? তবু বদলে যাওয়া এই নতুন স্বাভাবিকতায় নতুন করেই ভাবছেন কেউ কেউ। বাড়িতেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শিরোনামহীন ব্যান্ডের বেজিস্ট জিয়া ও নেমেসিসের ভোকাল জোহাদ। দুজনের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন মো. সাইফুল্লাহ
ঘরে বসে হোম কোয়ারেন্টিন্ড নামের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ঘরে বসে হোম কোয়ারেন্টিন্ড নামের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

এই অবেলায় জিয়ার আয়োজন

বেজ গিটার কিংবা চেলো হাতে জিয়া যদি ভক্তদের চোখে ‘জাদুকর’ হন, সঞ্চালক হিসেবে তিনি বিস্ময়কর তো বটেই। বাদ্যযন্ত্রে তাঁর হাত যেভাবে জাদুর মতো খেলা করে, উপস্থাপক হিসেবে ‘টিউন’ হয়তো এখনো ততটা নিখুঁত হয়নি। তবু শিরোনামহীনের অন্যতম কান্ডারি জিয়ার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, বেসরকারি টিভি চ্যানেল দীপ্ত টিভির হোম কোয়ারেন্টিনড অনুষ্ঠান সঞ্চালনার কাজটা তিনি বেশ উপভোগ করছেন। শনি থেকে বৃহস্পতিবার, প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটায় হোম কোয়ারেন্টিনড দেখা যাচ্ছে দীপ্ত টিভির ফেসবুক পেজেও।

এরই মধ্যে অনুষ্ঠানের ৩০টির বেশি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। অতিথি হিসেবে শুধু যে গানের মানুষেরা এসেছেন, তা নয়। অভিনয়শিল্পী, চিকিৎসক, শিক্ষক, পর্যটক, নানা পেশার মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন জিয়া। বলছিলেন, ‘অতিথিদের সবাই আমার পূর্বপরিচিত নন। কারও কারও সঙ্গে কথা বলার আগে আমাকে তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হচ্ছে।’ ঘরে বসে, মুঠোফোনে অনুষ্ঠানটির ভিডিও ধারণ করছেন জিয়া। অতএব, তাঁকে শুধু এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নয়, চিত্রগ্রাহকও বলা যায়। প্রতিটি পর্বের জন্যই নতুন নতুন পরিকল্পনা করছেন। বেশ একটা রোমাঞ্চের মধ্য দিয়ে সময় কাটছে।

পেছনের ভাবনাটা কী ছিল? জিয়া বললেন, ‘আমি তো চিকিৎসক নই, পুলিশ নই। এই দুঃসময়ে চাইলেও সামনের সারিতে থেকে মানুষকে সাহায্য করতে পারব না। আমি একজন এন্টারটেইনার। আমার জায়গা থেকে আমি মানুষকে বিনোদন দিতে চেষ্টা করছি।’

নতুন করে যাত্রা শুরুর পর বেশ ব্যস্ত সময় কাটছিল শিরোনামহীনের। হঠাৎ করোনার ধাক্কায় পরিকল্পনা কিছুটা ওলটপালট হয়ে গেছে। জিয়া জানালেন, ‘কাশফুলের শহর দেখা’ নামে একটি নতুন গানের মিউজিক ভিডিওর শুটিং শুরুও করেছিলেন তাঁরা। যেখানে অভিনয় করেছেন বাপ্পা মজুমদার। সব যেহেতু থমকে আছে, শিরোনামহীনের নতুন গানের জন্য ভক্তদের অপেক্ষা দীর্ঘ হবে আরও।

কত দীর্ঘ? সেই প্রশ্নের জবাব শুধু জিয়া নন, কারও কাছেই নেই। আবার কবে কোনো কনসার্টে দেখা হবে, কে জানে। তবে জিয়া আশাবাদী, গান যেভাবে ক্যাসেট থেকে সিডি, সিডি থেকে আইটিউনস কিংবা ইউটিউবের মতো মাধ্যমে পৌঁছেছে, সে রকম নতুন কোনো উপায় নিশ্চয়ই হয়েই যাবে। একদিন নিশ্চয়ই সব ঠিক হবে। পড়ন্ত বিকেলে ক্যাফেটেরিয়ায় উঁকি দিয়ে দেখা হবে ‘আবার হাসিমুখ’।

বন্ধু ও পরিবার নিয়ে ঘরে থেকেই চলছে গান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
বন্ধু ও পরিবার নিয়ে ঘরে থেকেই চলছে গান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জোহাদের জয়ধ্বনি

নেমেসিস ব্যান্ডের ভোকাল জোহাদের বাড়িতেই আছে একটা ছোটখাটো স্টুডিও। অতএব, কনসার্টে দেখা না হলেও জোহাদ একরকম ‘হোম অফিস’ করছেন বলা যায়। এই অস্থিরতার মধ্যে শ্রোতাদের একটু ভালো সময় উপহার দিতে ‘কোয়ারেন্টিন সেশন’ নামে একটি আয়োজন শুরু করেছিল নেমেসিস। ব্যান্ডের সদস্যরা যে যাঁর বাড়িতে বসে গেয়েছেন, বাজিয়েছেন। নতুন করে তুলে ধরেছেন পুরোনো গানগুলো। গত ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন সেশনের পাঁচটি গান তোলা হয়েছে নেমেসিসের ইউটিউব চ্যানেলে। জোহাদ বললেন, ‘অনেকে বলছে আপনারা কনসার্টে যে গানগুলো করেন, কোয়ারেন্টিন সেশনে সেগুলোই করছেন। তাই ভাবছি কনসার্টে যে গানগুলো কম গাওয়া হয়, সেগুলো দিয়ে আবার শুরু করব।’ অতএব, শিগগিরই শুরু হচ্ছে কোয়ারেন্টিন সেশনের দ্বিতীয় ধাপ, কিংবা একালের ভাষায় বলা যায় দ্বিতীয় সিজন।

নানা কিছু নিয়ে ব্যস্ত আছেন, অথবা একরকম ব্যস্ত থাকতে চাইছেন জোহাদ। ভক্ত-শ্রোতাদের সঙ্গে আরও যুক্ত হওয়ার জন্য কিছুদিন আগে একটি ইন্সট্রুমেন্টাল (যন্ত্রসংগীত) ফেসবুকে আপলোড করে আহ্বান জানিয়েছিলেন, চাইলে যে কেউ এই ইনস্ট্রুমেন্টালের সঙ্গে জ্যামিং করতে পারেন। সাড়া দিয়েছেন অনেকে। পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরে বন্ধু-স্বজনেরা মিলে ঘরে বসে একটা গানের ভিডিও করেছেন। সেটাও ফেসবুকে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। জোহাদ মনে করেন, এটাই তাঁর কাছে ইতিবাচক থাকা এবং অন্যকে ইতিবাচক হতে সাহায্য করার মন্ত্র। কারণ, এখন এমন একটা সময়, যখন আশা হারানো মানে হেরে যাওয়া। তিনি বলছিলেন, ‘খেয়াল করে দেখবেন, যেকোনো যুদ্ধ-বিপর্যয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু গান কিংবা শিল্প কখনো বন্ধ হয় না। এটা চলতেই থাকে। কারণ, শিল্পই পরবর্তী সময়ে ওই সময়টা তুলে ধরে।’

এরই মধ্যে নতুন কয়েকটা গান লিখেছেন জোহাদ। গিটার হাতে টুংটাং করতে করতে হয়তো একটা সুরও দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু পুরো কম্পোজিশনটা দাঁড় করাতে হলে ব্যান্ডের সব সদস্যকে এক হতে হবে। তাই লিরিক হাতে নিয়ে জোহাদ আপাতত অপেক্ষায় আছেন, ‘কবে এই কথাগুলো গাব সুরে!’