বিকল্প পথ খুঁজছেন সংগীতশিল্পীরা

শিল্পীদের একমাত্র আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়ায় স্টেজ শো ও কনসার্ট। ছবি: প্রথম আলো
শিল্পীদের একমাত্র আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়ায় স্টেজ শো ও কনসার্ট। ছবি: প্রথম আলো

ক্যাসেট-সিডি বন্ধ হওয়ায় শিল্পীদের আয়ের পথ সীমিত হয়ে যায়। গান থেকে রয়ালটি পাওয়ার সুযোগও তৈরি হয়নি এখনো। শিল্পীদের একমাত্র আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়ায় স্টেজ শো ও কনসার্ট। ২০২০ সালে বহু স্টেজ শো হওয়ার কথা ছিল। সাধারণ উৎসবগুলো ছাড়াও ছিল বিশেষ সব অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার মাধ্যমে রোজগারের সুযোগ। কিন্তু উৎসব আসার আগেই হানা দেয় করোনাভাইরাস। বন্ধ হয়ে যায় শিল্পীদের আয়ের পথ। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা কেউই বলতে পারে না। তাই আয়ের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে শিল্পীদের।

সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে ফিরেছেন অভিনয়শিল্পীরা। টেলিভিশনের জন্য সীমিত পরিসরে গানের অনুষ্ঠান করতে শুরু করেছেন গানের শিল্পীরা। তবে সংকটকালীন এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা, বিনা বা স্বল্প সুদে ঋণ প্রত্যাশা করেছেন শিল্পীদের অনেকে। শিল্পীদের কেউ আবার গান থেকে আয়ের বিকল্প পথ খুঁজে বের করার কথা ভাবতে পরামর্শ দিয়েছেন। সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, 'এই ভয়াবহ সংকটে প্রণোদনা দিয়ে সরকারকে অবশ্যই শিল্পীদের পাশে থাকতে হবে। অন্য সময় দুর্যোগে শিল্পীরা তহবিল সংগ্রহে এগিয়ে আসেন। করোনায় শিল্পীরা বিনা পয়সায় গান গেয়ে সাধারণ মানুষকে শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন। সংগীতশিল্পীদের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে।'

শিল্প-সংস্কৃতিভিত্তিক কাজকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পেশা বলে মনে করেন কুমার বিশ্বজিৎ। মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটার অনেক পরের বিষয় এটি। তিনি বলেন, 'স্টেজ শো যেহেতু নেই, অনলাইনের মাধ্যমে আয়ের কোনো উপায় ভাবতে হবে। আমাদের সুবীরদা (সুবীর নন্দী) কিন্তু ব্যাংকে চাকরি করতেন, পরে সংগীতকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। হতাশ হলে চলবে না। আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। অন্ধকার কখনো স্থায়ী হয় না, আলো আসবেই।'

২০২০ সালে বহু স্টেজ শো হওয়ার কথা ছিল। ছবি: প্রথম আলো
২০২০ সালে বহু স্টেজ শো হওয়ার কথা ছিল। ছবি: প্রথম আলো

স্টেজের বিকল্প নতুন মাধ্যম নিয়ে ভাবছেন আঁখি আলমগীরও। তিনি বলেন, 'আমরা গান ছাড়া বাঁচতে পারব না। কষ্টেও গাই, আনন্দেও গাই। কনসার্টে যেহেতু গান করার সুযোগ নেই, আমাদের নতুন মাধ্যম নিয়ে ভাবতে হবে।' তিনি মনে করেন, সংকটের এই সময়ে শিল্পীদের পাশে এগিয়ে আসতে পারে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। সংগীতভিত্তিক অনুষ্ঠানে বেশি করে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে। কারণ, অনেক শিল্পী নামমাত্র পারিশ্রমিকে টেলিভিশনে গান গেয়েছেন এত দিন। এই সংকটে শিল্পীদের নিয়ে তাঁদের ভাবতে হবে।
সোলস ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য পার্থ বড়ুয়া বলেন, 'মানুষের থাকা-খাওয়া ও বাঁচা নিয়ে যেখানে যুদ্ধ চলছে, বিনোদন সেখানে সেকেন্ডারি ইস্যু। জানি না সৃষ্টিকর্তা আমাদের ভাগ্যে কী রেখেছেন। তবে আমাদের বিকল্পও ভাবতে হবে।' বাপ্পা মজুমদারের ভাষায়, নতুন একটা মেকানিজম বের করা দরকার। সেটা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে খুবই সিরিয়াসলি। মনে রাখা জরুরি, লাইভ শো এ বছর না-ও হতে পারে! বছর শেষ হতে আরও ছয় মাস বাকি! সামনের চার মাসে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বাকি সময়টা কী হতে পারে, তা কিন্তু সহজে অনুমেয়, কাজেই সাময়িক কিছু উপায় বের করতেই হবে।'

আসিফ আকবর মনে করেন, সরকার শিল্পীদের বিনা সুদে বা স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিল্পীরা সেই ঋণ ধীরে ধীরে শোধ করবেন। নয়তো অনেক শিল্পীর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।