একেই বলে পাপারাজ্জি

মেহরীন
মেহরীন

তারকাদের বর্ণময় জীবনে থাকে বিচিত্র ঘটনা—কোনোটি বড়, কোনোটি সামান্য। এর মধ্যে এমন অনেক কিছু আছে, যা কাউকে কখনো বলা হয়নি। আজ মেহরীন শোনাচ্ছেন না-বলা সে রকম একটি ঘটনা

মানুষের জীবনে তো কত চমকপ্রদ ঘটনাই ঘটে। প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লসের সঙ্গে দেখা হওয়ার ঘটনাও আমার জীবনের চমকপ্রদ ঘটনার একটি। আজ যখন পেছনে ফিরে তাকাই, দেখি, চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাতের সেই মুহূর্ত আমার ভেতর সোনালি আলো হয়ে আছে! এই সাক্ষাতের ঘটনা মনে হলেই আমি ফিরে যাই ১৯৯৭ সালের দিকে। মেহ্রীন ভূঁইয়া (আমার পুরো নাম) তখনো সংগীতশিল্পী মেহ্রীন হইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে মাত্র স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি। তখনই আচমকা ঘটে গেল ঘটনাটি।

স্নাতকোত্তর পাস করার পর কমনওয়েলথ ইয়ুথ প্রোগ্রামের (সিওয়াইপি) তিন মাসের একটি কোর্সে ভর্তি হয়ে কেমন করে যেন প্রথম হয়ে যাই আমি। সেই সূত্রে কমনওয়েলথের আমন্ত্রণে আমার সুযোগ ঘটে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় যাওয়ার। কমনওয়েলথভুক্ত ৫০টি দেশের মধ্যে প্রতিটি দেশ থেকে দুজন করে তরুণ-তরুণী এ আমন্ত্রণ পান। সে হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ছিলাম আমি এবং আরেকজন ছেলে—আমরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছিলাম।

তো, নির্দিষ্ট দিনে এডিনবরার উদ্দেশে প্লেনে চড়লাম আমরা। প্রথমে আমাদের রাখা হলো নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত একটি ইয়ুথ ক্লাবে। রাজপ্রাসাদের মতো একটি বাড়িতে রাখা হয়েছিল আমাদের। সেখানে বানজি জাম্পিং, নৌকাবাইচ, ঘোড়ায় চড়াসহ কত রকমের যে মজার অভিজ্ঞতা!

পরে এলাম স্কটল্যান্ডের এডিনবরায়। এখানে থাকলাম সাত দিন। এর মধ্যে জানানো হলো, আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন প্রিন্স চার্লস। খবরটি শুনে আনন্দ তো আর ধরে না। ভাবি, প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে দেখা হবে! চার্লসের স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়ানা তখন মাত্র মারা গেছেন—এ নিয়ে চারদিকে বয়ে যাচ্ছে আলোচনার ঝড়, সাংবাদিকেরাও পিছু নিয়েছেন চার্লসের।

চার্লসের জন্য আমরা সবাই মিলে একটি চার্টার তৈরি করলাম। সেখানে লেখা ছিল সারা বিশ্বের তরুণ-তরুণীদের পক্ষ থেকে আমাদের বিভিন্ন দাবিনামা।

ঠিক হলো, স্কটল্যান্ডের একটি ক্যাসেলে তাঁর সঙ্গে আমাদের দেখা হবে। আমরা ৫০ জন ছেলেমেয়ে ক্যাসেলের হলরুমের বিভিন্ন টেবিলে গোল হয়ে বসে আছি চার্লসের অপেক্ষায়। মোট ১০টি টেবিলের মধ্যে আমরা বসেছিলাম ১ নম্বর টেবিলে। বসে আছি তো আছিই—কোথায় চার্লস?
হঠাৎ একজন লোক এলেন। আমাদের তিনি বললেন, ‘চার্লস কিছুক্ষণের মধ্যেই এখানে আসবেন। তোমরা তাঁর সঙ্গে স্বচ্ছন্দেই কথা বলবে; কিন্তু তাঁর স্ত্রী প্রসঙ্গে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করবে না। কারণ, বিষয়টি নিয়ে এমনিতেই তাঁর মন খুব ভারাক্রান্ত। আর হ্যাঁ, প্রথমে তিনি বসবেন ৯ নম্বর টেবিলে, তারপর ৬ ও ৩ নম্বর টেবিল ঘুরে ১ নম্বর টেবিলে বসে চার্টারে লেখা তোমাদের দাবিগুলো শুনবেন।’
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, সত্যিই কী আমাদের ১ নম্বর টেবিলে এসে বসবেন প্রিন্স অব ওয়েলস? অবশেষে তিনি এলেন। একসময় দেখলাম, তিনি এগিয়ে আসছেন আমাদের টেবিলের দিকে—ওমা, এসে বসলেন একদম আমার সামনাসামনি চেয়ারে!
মুখোমুখি আমি ও চার্লস। তাঁকে বললাম, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের এখন তারুণ্য। আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি। এভাবে অনেক কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
তবে মজার ঘটনাটি ঘটল চার্লস চলে যাওয়ার পর। হলরুমে এলেন পরির মতো সুন্দর একজন নারী। অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাদের তিনি জিজ্ঞেস করলেন, চার্লসের সঙ্গে আমাদের কী কী কথা হয়েছে। তাঁকে বললাম সবকিছু। কিন্তু দেখি, ভদ্রমহিলার মুখ বেজার। কেন?
পরে শুনেছিলাম, ওই নারী একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার সাংবাদিক। এখানে আমাদের কাছে এসেছিলেন চার্লস আমাদের ডায়ানা সম্পর্কে কোনো কথা বলেছেন কি না, তা জানতে। তখন মনে হয়েছিল, একেই বোধ হয় বলে পাপারাজ্জি!
অনুলিখিত