'প্রযোজক চাপিয়ে দিচ্ছেন নায়িকা'

>
মৌসুমী হামিদ। ছবি: মৌসুমী হামিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া।
মৌসুমী হামিদ। ছবি: মৌসুমী হামিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া।
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা ২০১০ আসরের প্রথম রানার আপ মৌসুমী হামিদ। এরপর থেকে নিয়মিত শোবিজে কাজ শুরু করেন তিনি। আজ ঢাকাসহ সারা দেশের ১৪ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে নতুন চলচ্চিত্র ‘জালালের গল্প’। এতে অভিনয় করেছেন তিনি। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই ছবিটির পরিচালক আবু শাহেদ ইমন। মৌসুমীর সঙ্গে কথা বলতে যখন ফোন করা হয়, তখন ছবিটি দেখতে তিনি বলাকা সিনেমা হলে যাচ্ছিলেন। এই ছবিসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরেছেন মনজুর কাদের।

ডেঙ্গুজ্বরে ভুগছেন এমন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন ফেসবুকে...
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আমি অসুস্থ। এখন কিছুটা সুস্থ। তবে শরীরটা এখনো দুর্বল। চিকিৎসকের নির্দেশমতো চলছি। কিন্তু ছবি মুক্তি পাওয়ার আনন্দে আর ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। তাই হলে ছুটছি।

জালালের গল্প সিনেমা প্রসঙ্গে কিছু বলুন?

বেশি কিছু বলতে চাই না। শুধু বলব, ‘জালালের গল্প’ ছবিটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পুরো ছবিতে পর্যায়ক্রমে নবজাতক, আট বছরের শিশু এবং ২০ বছরের এক ছেলের গল্প বলা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই নাম জালাল। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর পাড় ঘেঁষে তাদের জীবনসংগ্রামের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। আর পুরো ছবিটি বুঝতে হলে দর্শকদের হলে যেতে অনুরোধ করছি।

মৌসুমী হামিদ। ছবি: মৌসুমী হামিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া।
মৌসুমী হামিদ। ছবি: মৌসুমী হামিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া।

দর্শক হলে কেন যাবে বলে আপনার মনে হয়?
‘জালালের গল্প’ ছবিটি এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিয়েছে। এসব উৎসব থেকে প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি এর ঝুলিতে এসেছে বেশ কিছু সম্মানজনক পুরস্কারও। দেশের বাইরের বড় বেশ কয়েকটি উৎসবে যখন ছবিটি পুরস্কৃত হয়েছে এবং ছবিটি ফিল্ম বোদ্ধাদের ভালো লেগেছে-নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের দর্শকেরাও ছবিটি দেখবেন।

জালালের গল্প আপনার মুক্তি পাওয়া কততম চলচ্চিত্র?
এটা আমার তিন নম্বর চলচ্চিত্র। আমি সৌভাগ্যবান অভিনয়শিল্পী, কারণ খুব কাছাকাছি সময়ে আমার তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। আগস্টেই আমার দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। আজ আরেকটি মুক্তি পেল। একজন নবাগত হিসেবে সত্যিই আমার জন্য এর চেয়ে সুন্দর সময় আর হতে পারে না।

ঈদে আপনার কোনো ছবি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
এবারের ঈদেও আমার একটি ছবি মুক্তি পাবে। পরিচালক সাফি ভাই তেমনটিই বলেছেন। যদি তাঁর কথা ঠিক থাকে তাহলে ঈদে পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি টু ছবির মাধ্যমে দর্শক আমাকে পর্দায় দেখতে পাবেন।

মৌসুমী হামিদ। ছবি: মৌসুমী হামিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া।
মৌসুমী হামিদ। ছবি: মৌসুমী হামিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া।

টিভি নাটকেও আপনি কাজ করছেন। এখন আবার নিয়মিত চলচ্চিত্রেও কাজ করছেন। কেমন মনে হচ্ছে?
ফিল্ম অনেক কঠিন জায়গা। সেই তুলনায় নাটকের জায়গাটা অনেকটা সহজ। ফিল্মে পলিটিকস হয় বেশি। নাটকে তা নেই বললেই চলে। ফিল্মে অভিনয়ের চেয়ে কে কত বেশি রাজনীতি করতে পারে সেটাই বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর কোনো অভিনয়শিল্পী যদি একবার রাজনীতির মারপ্যাঁচে আটকে যায় তাহলে সে যতই মেধাবী হোক না কেন, তার পক্ষে বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব না। আমার কাছে এই ব্যাপারটা রীতিমতো ভয়ংকর মনে হয়েছে। তা ছাড়া এখন কিন্তু সিনেমা জগতের পরিবেশ পরিস্থিতিও কেমন যেন হয়ে গেছে।

সেটা কি নেতিবাচক না ইতিবাচক?
অবশ্যই নেতিবাচক।

সেটা কেমন?
ছবির ক্ষেত্রে এখন কিন্তু আমাদের দেশে নতুন একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে। দেখা যায়, নায়িকা নিজেই প্রযোজক নিয়ে আসছেন। আবার প্রযোজকও তাঁর পছন্দমতো নায়িকাকে চাপিয়ে দিচ্ছেন পরিচালকের ঘাড়ে। নায়কেরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বেশির ভাগ পরিচালকও এসব মেনে নিয়ে ছবির কাজ করে যাচ্ছেন। সবচেয়ে মজার বা দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, এসব ছবির বেশির ভাগই কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে না। কোনো প্রযোজকের দুই একটা ছবি হল পর্যন্ত যায় বটে, এরপর আর সেই সব প্রযোজকের কোনো হদিস মেলে না।

মৌসুমী হামিদ। ছবি: মৌসুমী হামিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া।
মৌসুমী হামিদ। ছবি: মৌসুমী হামিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া।

এ জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী কে বলে মনে করছেন আপনি?
আমি তো মনে করি এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী পরিচালকেরা। আমার কথা হচ্ছে, পরিচালক যখন একটা ছবি বানাবেন, তখন তিনিই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন তাঁর এই ছবিতে কে বা কাঁরা কাজ করলে সবচেয়ে ভালো করবেন। একটি জাহাজের ক্ষেত্রে যাত্রীদের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সেই জাহাজের ক্যাপ্টেনের। ঠিক তেমনি দর্শকদের ভালো সিনেমা উপহার দেওয়ার পুরো দায়িত্ব পরিচালকের। একজন পরিচালকই সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি কীভাবে কী করবেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখন অনেক গুণী ও মেধাবী পরিচালকেরা ছবি নির্মাণের জন্য ঠিকমতো বাজেটই পান না। অথচ যেসব পরিচালক ঠিকমতো ছবি বানাতে পারেন না, কিন্তু প্রযোজকের কথায় মাথানত করতে পারেন-তাঁরাই দিব্যি ছবির মহরত করে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই শুনছি-ছবির মহরত হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এতে করে সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে টাকার। আমার মতে, একজন নির্মাতাই চলচ্চিত্র বানানোর কাজ করেন। তাঁরাই যদি এই ধরনের প্রজেক্টগুলো করতে রাজি না হন, তাহলে চলচ্চিত্রের চেহারা কিছুটা হলেও পরিবর্তন হবে।

‘হাডসনের বন্দুক’ নামের একটি চলচ্চিত্রের কাজ করেছিলেন?
সরকারি অনুদানে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটির গল্প নেওয়া হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের একটি উপন্যাস থেকে। প্রশান্ত অধিকারীর পরিচালনায় এতে আমার সহশিল্পী মিশা সওদাগর। শুনেছি, ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। ঈদের পর ছবিটি হলে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবছেন পরিচালক।

ছোট পর্দার কাজের কী খবর?
বেশ কিছু কাজ করেছি। এর মধ্যে কয়েকটি হয়তো ঈদে প্রচার হবে।