চলে গেলেন সংগীতকার রবীন্দ্র জৈন

রবীন্দ্র জৈন
রবীন্দ্র জৈন

বাংলা ও হিন্দি গানের প্রখ্যাত সংগীতকার রবীন্দ্র জৈন দীর্ঘদিন রোগভোগের পর অবশেষে চলে গেলেন। গতকাল শুক্রবার ৯ অক্টোবর বিকেলে ভারতের মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে এই সংগীতকারের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

বেশ কয়েক বছর ধরেই কিডনিসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন রবীন্দ্র জৈন। ভারতের নাগপুরে হঠাৎ​ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিশেষ বিমানে করে তাঁকে মুম্বাইতে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর মুম্বাইয়ের বান্দ্রার লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। হাসপাতালে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। অবশেষে গতকাল শুক্রবার বিকেলে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর পাশে ছিলেন স্ত্রী দিব্যা জৈন এবং ভাই মণীন্দ্র জৈন।

বন্ধু রবীন্দ্র জৈনের মৃত্যুতে সংগীতজ্ঞ অনুপ জালোটা বলেছেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে কেবল একজন অসাধারণ একজন সংগীতকারকেই হারালাম না। চমৎকার একজন গীতিকার ও গায়ককেও হারালাম।’

অনুপ জালোটা জানান, তাঁর শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। রবীন্দ্র জৈনের মতো বিনয়ী, কোমল স্বভাবের মানুষ আর হয় না। তাঁর মুখে সব সময়েই যেন হাসি ফুটে থাকত। তিনি এমন একজন মানুষ; যার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরপরই তিনি তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ করে বসতেন। তিনি আরও বলেন, ‘ভাবা যায়! একজন জন্মান্ধ মানুষ কী অসাধারণভাবে সব কিছু দেখতে পারতেন! আর এরপর সেসব নিয়ে সুন্দর সব গানের চরণ লিখতেন।’

অনুপ জালোটা বলেন, ‘দেখা হলেই হাসিমুখে হয় কৌতুক; নয়তো তাঁর লেখা কোনো কবিতা (শায়েরি) শোনাতেন।’ তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই তাঁকে চিনতাম। আমার বাবা পুরুষোত্তম জালোটাকে রবীন্দ্র জৈন খুব ভক্তি করতেন। তাঁর সঙ্গে দুটি ছবির কাজও করেছি আমি। ‘পেয়ার কা শাওন’ এবং ‘চিন্তামনি সুরদাস’ ছবিতে তাঁর সুরারোপিত গানে কণ্ঠ দিয়েছিলাম আমি। এ ছাড়াও, তাঁর লেখা অনেক ভজনও আমি গেয়েছি।’


ভারতের আলিগড়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্র জৈন। তাঁর বাবা ছিলেন সেখানকার একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত ইন্দ্রমণি জৈন। মা কিরণ জৈন। শৈশব থেকেই সংগীতের প্রতি তীব্র আগ্রহ ছিল জন্মান্ধ এই সংগীতকারের। সে সময় থেকেই নামকরা জৈন কবিদের কবিতা ও ভজন গাইতেন তিনি। রবীন্দ্র জৈনের বাবা তাঁর সন্তানকে সংগীত শিক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন পণ্ডিত জি এল জৈনের কাছে। সংগীত শিক্ষায় তাঁর শিক্ষক হিসেবে রবীন্দ্র জৈন পেয়েছিলেন পণ্ডিত নাথুরাম ও জনার্দন শর্মার মতো সংগীতজ্ঞকে।

রবীন্দ্র জৈন বাংলা ছবিতে গান গাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন ষাটের দশকের দিকে। এর প্রায় দশ বছর পর তিনি মুম্বাইতে যান। মোহাম্মদ রফি রবীন্দ্র জৈনের সুরারোপিত গানের রেকর্ড করেছিলেন। রাজকাপুরের ছবির মাধ্যমেই বলিউডের ছবিতে কাজ করার প্রথম বড় সুযোগ পান রবীন্দ্র জৈন। ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ও ‘দো জাসুস’ ছবিতে সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ মেলে তাঁর। তিনি তাঁর প্রতিভার প্রমাণও দিয়েছিলেন। ‘রাম তৈরি গঙ্গা মালি’ ছবির সংগীত পরিচালনার জন্য রবীন্দ্র জৈন পেয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।

এ ছাড়াও, বলিউডের ‘চোর মাচায়ে শোর’, গীত গাতা চল, চিতচোর’ ছবিতে সংগীতকার হিসেবে​ তিনি তাঁর প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। অবশ্য কেবল একজন সুরকার হিসেবেই নয়, গীতিকার হিসেবেও বলিউডের অনেক ছবির গানের কথা লিখেছিলেন তিনি।

২০১৫ সালে রবীন্দ্র জৈন ভারতের ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা সংগীতজগতের সঙ্গেও তাঁর গভীর যোগাযোগ ছিল। বাংলা গানের অসংখ্য অ্যালবাম এবং ছবির জন্যও রবীন্দ্র জৈন সংগীতকার হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল অধ্যায়েরই যেন ইতি ঘটল। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া। মিড-ডে।