ধনকুবেরদের মন্ত্রিসভা বানাচ্ছেন ট্রাম্প

বেটসি ডেভস,উইলবার রস,ইলেইন চাও,স্টিভ মিনুশিন
বেটসি ডেভস,উইলবার রস,ইলেইন চাও,স্টিভ মিনুশিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পর্যন্ত যে কজন ব্যক্তিকে তাঁর ভবিষ্যৎ মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই তাঁর মতো ধনকুবের। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ওয়াল স্ট্রিট ও দুষ্ট ব্যাংকারদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের রাজনীতিবিদদের যোগসাজশে মার্কিন কর্মজীবী মানুষের পথে বসার জোগাড় হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এই যোগসাজশ তিনি ভেঙে দেবেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসকে কর্মজীবী মানুষের এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন ট্রাম্প। অথচ এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এমন ব্যক্তিদের নিজের মন্ত্রিসভায় স্থান দিচ্ছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে দুই দিন আগেও প্রবল বিষোদ্গার করেছিলেন। সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস, যাঁদের অন্ততপক্ষে তিনজন ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার জন্য মনোনীত হয়েছেন। সম্পদের হিসাবে তাঁদের প্রত্যেকেই শতকোটিপতি (বিলিয়নিয়ার) কিংবা কোটিপতি (মিলিয়নিয়ার)। এখন পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় সম্ভাব্য স্থান পাওয়া ধনকুবেরদের তালিকায় রয়েছেন ৫১০ কোটি ডলারের মালিক বেটসি ডেভস (শিক্ষা দপ্তর); ২৯০ কোটি ডলারের মালিক উইলবার রস (বাণিজ্য দপ্তর); ১০০ কোটি ডলারের মালিক টড রিকেটস (সহকারী মন্ত্রী, বাণিজ্য দপ্তর); ৪ কোটি ডলারের মালিক স্টিভ মিনুশিন (রাজস্ব দপ্তর); ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মালিক ইলেইন চাও (শিক্ষা দপ্তর) এবং ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের মালিক টম প্রাইস (স্বাস্থ্য দপ্তর)।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে ট্রাম্প মিট রমনিকে বিবেচনা করছেন বলে জল্পনাকল্পনা চলছে। বর্তমান বাজারমূল্যে রমনির সম্পদের পরিমাণ ২৫ কোটি ডলার। ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননও—যিনি একসময় গোল্ডম্যান স্যাকসের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন—বিলিয়নিয়ার হিসেবে পরিচিত।
রাজস্ব বিভাগে মিনুশিনের সহকারী হিসেবে আরেক মিলিয়নিয়ারের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন সাবেক গোল্ডম্যান স্যাকস ব্যাংকার অ্যান্থনি স্কারামুচি।
রস ও মিনুশিন—গোল্ডম্যান স্যাকসের এই দুই সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর ভার পড়ছে অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার। তাঁরা দুজনই ওয়াল স্ট্রিটের সুপরিচিত মুখ। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার জন্য যাঁদের দায়ী করা হয়—দুজন তাঁদের অন্যতম। দুজনেই মন্দাবস্থার ফলে দেউলিয়া ব্যবসা কম মূল্যে কিনে বড় মুনাফা অর্জন করেছেন। এখন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়ে তাঁরা ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি বন্ধুসুলভ নীতি অনুসরণ করবেন এবং ওবামা প্রশাসন গত আট বছরে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যেসব নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, তা এক এক করে তুলে নেবেন—ওয়াল স্ট্রিট সেই আশাই করছে। ট্রাম্প নিজেই আশ্বাস দিয়েছেন, এরপর থেকে প্রতিটি নতুন নিয়মবিধি আরোপিত হলে অন্ততপক্ষে দুটি পুরোনো নিয়মবিধি বাতিল করতে হবে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে গোল্ডম্যান স্যাকস ও অন্যান্য বড় আর্থিক সংস্থার শেয়ারবাজার আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। বলা বাহুল্য, এ পর্যন্ত ট্রাম্প যাঁদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁদের কারও প্রশাসনিক ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে শঙ্কিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা। দলের দুই প্রধান বামপন্থী সিনেটর—বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেন—এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছিলেন, ওয়াল স্ট্রিট ও ওয়াশিংটনের আঁতাত তিনি ভেঙে দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা তিনি করেছেন, তার ফলে কমার বদলে ওয়াল স্ট্রিটের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে। স্টিভ মেনুশিন, যাঁকে ভার দেওয়া হয়েছে রাজস্ব বিভাগের, তিনি ওয়াল স্ট্রিটের ভেতরের লোক ছাড়া আর কিছু নন। এই মনোনয়নকে এক বড় রকমের ঠাট্টা বলে অভিহিত করেন এই দুই উদারনৈতিক সিনেটর।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মিনুশিন জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে তাঁর প্রথম কাজই হবে বৃহৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত করপোরেট কর হ্রাস করা। মধ্যবিত্তের জন্যও বড় ধরনের কর হ্রাসের কথা তিনি বলেছেন। এ ব্যাপারে তিনি ট্রাম্পের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সমর্থন পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্ত্রী পর্যায়ের যাঁরা মনোনয়ন পেলেন, তাঁদের প্রত্যেককে দায়িত্ব গ্রহণের আগে সিনেটের সামনে শুনানির সম্মুখীন হতে হবে। ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছে, এসব বিলিয়নিয়ার, যাঁরা ২০০৮ সালের মন্দাবস্থার জন্য দায়ী, বিনা যুদ্ধে তাঁদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দেবেন না।