একাই রাস্তা তৈরি করলেন তিনি!

টিলার মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করছেন শশী। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
টিলার মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করছেন শশী। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

গ্রামে একটি রাস্তা তৈরির আরজি জানাতে পঞ্চায়েতের কাছে গিয়েছিলেন শশী। গ্রামে রাস্তা হলে শরীরের ডান পাশ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত শশী হুইলচেয়ারে চলাচল করতে পারতেন। এভাবে চলাফেরা করে ছোট্ট একটা ব্যবসা করারও স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু গরিব ও অসুস্থ একজন মানুষের ছোট্ট স্বপ্নটাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল পঞ্চায়েত। গ্রামে রাস্তা তো হবেই না, হুইলচেয়ারও দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিল পঞ্চায়েত। এই অপমানে হার মানেননি শশী। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত শশী একাই গ্রামে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করলেন। টানা তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে অবশেষে নির্মাণও করে ফেলেছেন পুরো ২০০ মিটার রাস্তা। পঞ্চায়েতের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, চাইলেই সব করা যায়, পক্ষাঘাত কোনো বাধা নয়। আর এই রাস্তা একার জন্য নয়, পুরো গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্তও করে দিয়েছেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কেরালা রাজ্যের থিরুভানান্থাপুরামের একটি গ্রামে।

এনডিটিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শশীর বয়স ৫৯ বছর। তিনি গাছির কাজ, বিশেষ করে গাছ থেকে নারকেল পাড়ার কাজ করতেন। ১৮ বছর আগের ঘটনা। একবার নারকেলগাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। অনেক দিন বিছানায় থাকার পর তাঁর ডান হাত ও পা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে অনেক ধীরে হাঁটাচলা করতে পারেন। বছর তিনেক আগে একদিন তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে গিয়ে একটি তিন চাকার হুইলচেয়ারের আবেদন জানান। এতে তিনি একটি ছোট ব্যবসা করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন। গ্রামে হুইলচেয়ার চলাচলের উপযোগী কোনো রাস্তা না থাকায়, একটি রাস্তা নির্মাণের আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর সেই কথায় কান দেননি পঞ্চায়েতের সদস্যরা।

শশী বলেন, ‘সেদিন পঞ্চায়েত বলেছিল, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলেও তোমাকে হুইলচেয়ার দেওয়ার কোনো উপায় নেই। তারা জানায়, যে রাস্তা নির্মাণের কথা আমি বলছি, তা কোনো দিনও হবে না।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, পঞ্চায়েতের কাছে আশ্বস্ত না হলেও দমে যাননি শশী। একাই টিলার মাটি কেটে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। প্রতিদিন প্রায় ছয় ঘণ্টা করে কোদাল চালিয়ে তিনি রাস্তার জন্য মাটি কাটতেন। টানা তিন বছর এভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ২০০ মিটার দীর্ঘ একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে ফেলেছেন শশী। শুধু হুইলচেয়ার নয়, এই সড়ক দিয়ে এখন ছোট আকারের যেকোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে।

‘মানুষ ভাবত, আমি কিছুই পারব না, এ কারণে রাস্তায় মাটি কাটা শুরু করি। ভেবেছিলাম, আমি যদি মাটি কাটা চালিয়ে যাই, তাহলে একটি রাস্তা পাব। আর এতে আমার পক্ষাঘাতের জন্য ভালো ব্যায়ামও হবে। ভেবেছিলাম, পঞ্চায়েত নাই–বা দিল একটি হুইলচেয়ার। ভবিষ্যতে মানুষ তো একটি সড়ক পাবে। এতেই শান্তি।’ এভাবেই একটি রাস্তা নির্মাণের কথা বলছিলেন শশী।

শশীর প্রতিবেশী ৫২ বছর বয়সী সুধা বলেন, রাস্তা নির্মাণের জন্য শশীর প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ। এখন চলাচল করতে তাঁদের উঁচু টিলা ডিঙাতে হয় না। সহজেই চলাচল করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে শশী মাটি কাটার কাজ করায় আমি তাঁকে নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। তবে এখন আমি বিস্মিত।’

রাস্তা নির্মাণের কথা বলতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন শশী ও তাঁর স্ত্রী। কান্না জড়িত কণ্ঠে তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘এভাবে রাস্তা তৈরি না করতে আমি তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম। আবার যদি তাঁর কিছু হয়ে যেত! তাঁর চিকিৎসা করানোর মতো আমাদের অবস্থা নেই। আমরা ঋণে জর্জরিত। এখন সবাই এই রাস্তা নিয়ে শশীর প্রশংসা করছেন। কিন্তু এই প্রশংসা দিয়ে আমাদের কী হবে।’

স্ত্রী কথা শুনে মৃদু হেসে শশী বলেন, এই রাস্তার কাজ একদম শেষ করতে আমাকে আরও এক মাস এভাবেই পরিশ্রম করতে হবে।’ তবে পঞ্চায়েত এখনো তাঁকে তিন চাকার গাড়ি দেয়নি।