গ্রিসে তরুণ শরণার্থীদের নতুন জীবন

জাওয়াদ আহমাদি এক বছর আগে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে পৌঁছান। সঙ্গে বড় ভাই ও চাচাতো ভাই। আহমাদির গন্তব্যস্থল ছিল জার্মানি। ভেবেছিলেন, কিছুদিনের জন্য গ্রিসে থাকবেন।

কিন্তু গ্রিসে যখন পৌঁছালেন, তখন বন্ধ হয়ে গেছে ইউরোপের সীমান্ত। ফলে আটকে যান। ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায়।

আহমাদি বলেন, ‘আট মাস ধরে প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে জানতাম না যে দিনটা কাটবে কীভাবে? খুব দিশেহারা লাগত।’

চার মাস আগে আহমাদি এথেন্সের গ্রিক শরণার্থী ফোরাম ও গ্রিক ভাষা শিক্ষায় ভর্তি হন। এরপরই বদলে যায় জীবন। গ্রিক ভাষা শেখার পর আহমাদি এখন ফুটবল দল গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাগুলোর সহায়তায় শরণার্থীদের নতুন জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের জীবনটাও গুছিয়ে নিচ্ছেন। আহমাদি বলেন, ‘আমি কম্পিউটার বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাই। একই সঙ্গে ফুটবলও খেলতে চাই। এটাই আমার আগ্রহের বিষয়।’

গ্রিসে থাকাটাকেই সৌভাগ্য বলে মনে করেন আহমাদি। তিনি বলেন, এখানে সরকার শরণার্থীদের সাহায্য করে না। এখানে জার্মানির চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, জার্মানিতে শরণার্থীরা অনেক স্বস্তিতে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনহিতকর সংস্থা মার্সি কর্পসের সহায়তায় আহমাদি এখন ফুটবল দল গড়ে তুলেছেন। গ্রিস, স্পেন এবং ইউরোপীয় অন্য দেশের স্বেচ্ছাসেবী ও শরণার্থীদের নিয়ে গত জানুয়ারি মাস থেকে আহমাদির দল বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে।

মার্সি কর্পসের কর্মী মনিকা রাব্বি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এখানে শিশুদের অনেক রকম কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তবে ফুটবল দলে কিশোর ও তরুণ কিছু কম। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে। স্থানীয় খেলোয়াড়দের সহায়তায় বিভিন্ন আর্থিক প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে।’

আহমাদি বলেন, গ্রিক ও ইউরোপীয় শরণার্থীদের মেলামেশার অন্যতম মাধ্যম খেলা।

এই ক্যাম্পে গত বছরের মার্চ মাসে এসেছেন ২২ বছরের সিরীয় ইমান আল বোহতরি। তিনিও খেলাধুলা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছেন।

মেলিসা এখন ভাস্কর্য তৈরির কাজ শিখছেন। আলু খোদাই করে তিনি বিভিন্ন পুতুল বানান।

মার্সি কর্পসে জীবনকে অনেকটাই উপভোগ করছেন বোহতরি। সেখানে তিনি গিটার বাজান।

দুই সন্তানের সিরীয় মা জোজেন ডাউড বলেন, ‘মার্সি কর্পসে বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে আমরা অনেকটাই আরামে আর আনন্দে থাকি। ক্লাসে আমরা অনেক আরামে আর স্বস্তিতে থাকি। যদিও বসবাসের জন্য গ্রিস কখনোই আমার প্রথম পছন্দের দেশ ছিল না। তারপরও এখানে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। এখানেই থাকা, এখানকার ভাষা শেখা ও চাকরির চেষ্টা করছি।’