অবশেষে পুরস্কার নিতে রাজি বব ডিলান

অনেক জল্পনা-কল্পনার পর সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার নিতে সম্মত হয়েছেন প্রখ্যাত মার্কিন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলান। এই সপ্তাহের শেষে ৭৫ বছর বয়সী ডিলান পুরস্কার গ্রহণ করবেন। সুইডিশ রয়েল একাডেমি আজ বুধবার এই কথা জানিয়েছে।

বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গত বছরের অক্টোবরে পুরস্কার ঘোষণা হলেও ডিলান পুরস্কার গ্রহণ করেননি। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে ডিলানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা ছিল। তিনি পুরস্কার হিসেবে ৮০ লাখ ক্রোনার পাবেন। সুইডিশ একাডেমি জানিয়েছে, তারা একান্তে ডিলানের সঙ্গে দেখা করে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেবে।

তবে তিনি প্রকাশ্যে নোবেল পুরস্কার গ্রহণের বক্তব্য দেবেন না, বরং রেকর্ডকৃত একটি ভাষণ পরবর্তীতে প্রকাশ করবেন। যদি জুন মাসের মধ্যে ডিলান বক্তব্য প্রদান না করেন তাহলে পুরস্কারের অর্থ হাতছাড়া করতে হবে।

সুইডিশ একাডেমির পারমানেন্ট সেক্রেটারি সারা দানিয়াস বলেন, বব ডিলান ও সুইডিশ একাডেমি এই সপ্তাহে মিলিত হচ্ছে। বৈঠকটি হবে ছোট এবং আন্তরিক। সেখানে কোনো গণমাধ্যমের উপস্থিত থাকবে না। শুধু বব ডিলান এবং একাডেমির সদস্যরা উপস্থিত থাকবে।

সারা দানিয়াস বলেন বলেন, এর আগেও রেকর্ড করা ভাষণ দিয়েছেন নোবেল পুরস্কার জয়ীরা। ২০১৩ সালে এলিস মুনরো রেকর্ড করা ভাষণ দিয়েছিলেন।

৭৫ বছর বয়সী ডিলানের সংগীতশিল্পী হিসাবে আবির্ভাব ঘটে ১৯৫৯ সালে। মিনেসোটার বিভিন্ন কফি হাউসে গাইতেন তিনি। ষাটের দশকেই সংগীত জগতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ডিলান। তাঁর ‘ব্লোইন ইন দ্য উয়িন্ড’, ‘মাস্টার্স অব ওয়ার’, ‘এ হার্ড রেইন’স এ-গোনা ফল’, ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’ গানগুলো দ্রোহ ও স্বাধীনতার ভাব বহন করে। এই গানগুলো যুদ্ধবিরোধী ও নাগরিক আন্দোলনের অনেক সংগঠন মর্ম সংগীত হিসেবে ব্যবহার করে। ডিলান প্রায় ৫০ বছর ধরে সংগীত জগতে সক্রিয় আছেন। এখনো তিনি গান লেখেন ও সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন।

১৯৭১ সাল; পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ, নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্বিচারে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবর বন্ধুবান্ধব ও সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জেনে কিছু একটা করার তীব্র তাগিদ থেকেই বিটলস খ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশঙ্কর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের সাহায্যার্থে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। ১ আগস্টের এই কনসার্টে জর্জ হ্যারিসন যেমন ‘বাংলা দেশ’ গান লিখে ও গেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন, তেমনি এই অনুষ্ঠানে আরেকজনের উপস্থিতি কনসার্টের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল বহু গুণে। তিনি হলেন বব ডিলান, মার্কিন রক ও ফোকসংগীতের জগতে ষাটের দশকেই কিংবদন্তিতুল্য নাম। কনসার্ট ফর বাংলাদেশে বব ডিলান তাঁর বিখ্যাত ‘ব্লোইং ফর দ্য উইন্ড’ গানটি পরিবেশন করেছিলেন। এবং এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ আট বছর পর এটাই ছিল বব ডিলানের জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশনা। বিট কবি অ্যালেন গিনসবার্গের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করে লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘যশোর রোড’কেও গানে রূপান্তরের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন বব ডিলান। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় আরও একজন শিল্পী গিটার হাতে গেয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ (২৫ মার্চ ১৯৭১) গান। তাঁর নাম জোয়ান বায়েজ, বব ডিলানের দীর্ঘদিনের সহচর। তাঁরা একসঙ্গে বহু সংগীতসফরে অংশ নেন। ডিলানের বিখ্যাত রোলিংস্টোন রিভ্যু ট্যুরের (১৯৬৪-৬৫, ১৯৭৫-৭৬) প্রতিটিতে সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন জোয়ান বায়েজ। ১৯৮৪ সালে বব ডিলানের বিখ্যাত ইউরোপ সফরেও জোয়ান ছিলেন অবিচ্ছিন্ন সঙ্গী, এই সফরে তাঁরা গান বিখ্যাত ‘ব্লোইং ইন দ্য উইন্ড’ ও ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গান দুটো।