ক্ষমতা বাড়ছে এরদোয়ানের, বিরোধীদের পুনর্গণনা দাবি

গণভোটে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গতকাল রাজধানী আংকারার এসেনবোগা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে সমর্থকেরা তাঁকে স্বাগত জানায়। এরদোয়ান এ সময় বক্তব্য দেন l রয়টার্স
গণভোটে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গতকাল রাজধানী আংকারার এসেনবোগা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে সমর্থকেরা তাঁকে স্বাগত জানায়। এরদোয়ান এ সময় বক্তব্য দেন l রয়টার্স

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানো প্রশ্নে গত রোববার অনুষ্ঠিত গণভোটে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ফলাফল অনুযায়ী, সামান্য ব্যবধানে তিনি জয়ী হন। ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষে এবং ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ বিপক্ষে মত দেন। অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করার কথা জানিয়েছেন বিরোধীরা।

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হওয়ায় দৃশ্যত আধুনিক তুরস্কের রাজনীতিতে নিজেকে অত্যন্ত ক্ষমতাধর একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

বিজয় ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, ‘তুরস্কের ইতিহাসে এবারই প্রথম আমরা বেসামরিক রাজনৈতিক পন্থায় শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চলেছি।’

এরদোয়ান বলেন, এখন ভোটের প্রস্তাব অনুযায়ী দেশে সংসদীয় ব্যবস্থার স্থলে প্রেসিডেন্টশাসিত পদ্ধতি চালু হবে। বিলুপ্ত হবে প্রধানমন্ত্রীর পদ। 

এরদোয়ানের বিরোধীরা গণভোটের ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা ভোট পুনর্গণনার দাবিও জানিয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রধান কেমাল কিলিচদারোগলু বলেন, এ গণভোটের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাঁরা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পুনর্গণনার দাবি জানাবেন।

সিএইচপি নেতা অভিযোগ করেন, এরদোয়ান ‘এক ব্যক্তির শাসনামল’ চাইছেন। বিরোধীদের দাবির মুখে নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, যেসব ব্যালটে সিল পড়েনি, তা গণনাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন নয়।

গণভোটের ফলাফলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে, সেগুলোর অধিকাংশ কার্যকর হবে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় দেশটির পরবর্তী নির্বাচনের পর। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে আছে—প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ও অজ্ঞাতসংখ্যক ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেবেন। জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়াই একক ক্ষমতাবলে তাঁদের অপসারণ করতে পারবেন তিনি।

তুরস্কের মানুষের মধ্যে গুঞ্জন ছিল, এরদোয়ান আগাম নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন; যাতে অবিলম্বে তাঁর নতুন ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে পারেন। তবে তুর্কি উপপ্রধানমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক রয়টার্সকে বলেন, প্রেসিডেন্টের এ রকম কোনো পরিকল্পনা নেই। নির্বাচন ২০১৯ সালেই হবে।

গণভোটে এই অভূতপূর্ব বিজয়ের অল্পদিন আগেই গত জুলাইয়ে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান থেকে নিজেকে রক্ষা করেন এরদোয়ান। পরে অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত সন্দেহে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আমলাতন্ত্র, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় খাতে তিনি ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান চালান।

ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বেগ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাহী কর্তৃপক্ষ ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) বলেছে, খুব কাছাকাছি ফলাফল এটাই নির্দেশ করে, এটা কার্যকর করার আগে এ বিষয়ে ব্যাপকভিত্তিক জাতীয় মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো–অপারেশন ইন ইউরোপ ও কাউন্সিল অব ইউরোপ ভোট প্রক্রিয়া ভালোভাবে চলেছে বলে স্বীকৃতি দিলেও প্রচারণার সমালোচনা করেছে। সংগঠন দুটি বলেছে, প্রচারণায় সবার জন্য সমান সুযোগ ছিল না।

ইইউ দেশগুলোতে তুর্কি জনগোষ্ঠী যে দেশে সবচেয়ে বেশি সেই জার্মানি বলেছে, ভোটের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফল প্রমাণ করে দেশটি গভীরভাবে বিভক্ত এবং এ জন্য প্রেসিডেন্টসহ নেতাদের দায়িত্ব অনেক।

ফ্রান্স বলেছে, এখন মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার জন্য গণভোট নিলে তা কাউন্সিল অব ইউরোপের সদস্যপদের চেতনাবিরোধী হবে। তুরস্ক এ মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনের সদস্য। আর অস্ট্রিয়া বলেছে, ভোটের এ ফল তুরস্কের জন্য ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।