যৌন নির্যাতনের উচিত সাজা!

ধর্ষণের চেষ্টা চালানোর সময় তথাকথিত এক ‘স্বামীজির’ যৌনাঙ্গ কেটে দিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এক তরুণী। অভিযোগ, নিজ বাড়িতেই ছয় বছর ধরে ওই তরুণীকে যৌন নির্যাতন করতেন স্বামীজি। গতকাল শুক্রবার রাতে ভারতের কেরালা রাজ্যের পেত্তাহ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

আজ শনিবার ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বামী গণেশানন্দ ওরফে হরি স্বামী (৫৪) নামের ওই ব্যক্তিকে গতকাল রাতেই পুলিশ উদ্ধার করে থিরুভানান্থপুরম হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।

তরুণীর এই কাণ্ডে প্রশংসা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তাঁর পাশে থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মেয়েটি চরম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।’

পুলিশের উপকমিশনার অরুল বি কৃষ্ণ বলেন, কয়েক বছর ধরে ওই তরুণীর বাবা শয্যাশায়ী। বাড়ি থেকে সব ধরনের রোগ-বালাই দূর করার উদ্দেশ্যে স্বামী গণেশানন্দ ওরফে হরি স্বামীর শরণাপন্ন হন তরুণীর মা। এ কারণে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে আচার পালনে যেতেন গণেশানন্দ।

পুলিশ জানায়, ছয় বছর আগে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই স্বামী গণেশানন্দ ওই তরুণীকে যৌন নির্যাতন করেন। গতকাল রাতে স্বামী গণেশানন্দ ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তরুণী ছুরি দিয়ে গণেশানন্দের যৌনাঙ্গ কেটে দেন। পরে তিনি ভয়ে নিজেই পুলিশকে ফোনে বিষয়টি জানান।

অভিযুক্ত স্বামী গণেশানন্দের দাবি, তিনি কেরালার কোল্লামের চত্তাম্বি স্বামী আশ্রমের সদস্য। তবে ওই আশ্রম কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁর সঙ্গে এই আশ্রমের কোনো সম্পর্ক নেই।

আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৫ বছর আগে গণেশানন্দ এই আশ্রমের ব্রহ্মচারী ছিলেন। এখন নেই। সুনামের জন্য তিনি নিজেকে এই আশ্রমের সদস্য পরিচয় দিতেন।

এনডিটিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।

ওই তরুণী বলেন, বাবার অসুস্থতার কারণে স্বঘোষিত ‘স্বামীজি’ গণেশানন্দ প্রায়ই নানা আচার পালন করতে তাঁদের বাড়িতে যেতেন। এ কারণে তাঁর মায়ের সঙ্গে গণেশানন্দের ভালো খাতির ছিল। এই সুযোগে তিনি ওই তরুণীকে প্রায়ই যৌন নির্যাতন করতেন। তাঁর যখন ১৬ বছর বয়স, তখনই গণেশানন্দ তাঁকে ধর্ষণ করেন। এরপর নিয়মিত এই ঘটনা ঘটত। গতকাল রাতে এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে, ধর্ষণের চেষ্টা করার সময় গণেশানন্দের যৌনাঙ্গে ছুরি চালান তরুণী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, যৌনাঙ্গের বেশির ভাগ অংশই ছিন্ন হয়ে গেছে। এ অস্ত্রোপচার করে তা জোড়া লাগানোর মতো অবস্থায় ছিল না। এ কারণে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গণেশানন্দের নিয়মিত ধর্ষণ করার বিষয়টি ওই তরুণী তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এতে কোনো পাত্তা দেননি।

পুলিশের উপকমিশনার অরুল বি কৃষ্ণ বলেন, গণেশানন্দের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। তাঁকে আশ্রয় ও সহযোগিতা করায় ওই তরুণীর মায়ের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।

পুলিশ জানায়, স্বামীজির যৌনাঙ্গ কেটে দিলেও ওই তরুণীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। কারণ, ওই তরুণী দীর্ঘদিন থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার ছিলেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই ওই তরুণীর পাশে দাঁড়ানো উচিত।