পানির নিচে গুহায় দুই দিন আটকা

উদ্ধারের পর ডাইভার জিসকো গার্সিয়া। ছবি: বিবিসি
উদ্ধারের পর ডাইভার জিসকো গার্সিয়া। ছবি: বিবিসি

তিন মাস আগের কথা। জিসকো গার্সিয়া পানির নিজের অক্সিজেন ছাড়াই ছিলেন পাক্কা দুই দিন। স্পেনের মাল্লোরকা দ্বীপপুঞ্জের পানির নিচের গুহা থেকে পাথর ও শিলাখণ্ড সংগ্রহের জন্য নামতে গিয়েই বিপদে পড়েন গার্সিয়া।

ভূমধ্যসাগরে স্পেনের একটি দ্বীপ মাল্লোরকা। গত ১৫ এপ্রিল সেই দ্বীপের পানিতে নামেন ডাইভার জিসকো গার্সিয়া। দ্বীপপুঞ্জের অতিপ্রাকৃত এবং দ্বীপের নিচের অবস্থা জানতেই পানির নিচের নামেন ভূতত্ত্বের শিক্ষক গার্সিয়া। তিনি বন্ধু গুইল্লেম মাসকারকে নিয়েই পানিতে নামেন। তাঁরা একসঙ্গে ঘণ্টা খানেক সময় কাটান। গার্সিয়া পানির নিচে গুহা থেকে পাথর ও শিলাখণ্ড সংগ্রহের জন্য সময় কাটান। তিনি বলেন, ‘মাল্লোরকার পানির নিচের এলাকা ওপরের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর।’

৫৪ বছরের গার্সিয়া বলেন, ‘পানির নিচে গুহায় ঢোকার সময় কিছু নিয়ম আপনাকে অনুসরণ করতে হবে। আমরা শুধু অনুমান করতে পারি যে সেখানে কিছু পাথর পড়ে থাকবে। আমরা মূল্যবান সময় ব্যয় করেও পাথর ছুঁয়ে দেখতে পারিনি।’

পানিতে নামলে ডাইভারদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ছবি: বিবিসি
পানিতে নামলে ডাইভারদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ছবি: বিবিসি

তবে পানিতে নামার একপর্যায়ে জিসকো গার্সিয়া ও গুইল্লেম মাসকার বিপদেই পড়ে যান। সঙ্গে থাকা অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। সংকটকালে ব্যবহারের জন্য থাকা অক্সিজেনও নিঃশেষ হতে থাকে। তখনই গার্সিয়ার মনে পড়ে যায় এয়ার পকেটের কথা। এরপরই মাসকারকে হ্যাঁচকা টানে কাছে এনে এই এয়ার পকেটের কথা বলেন গার্সিয়া। উভয়ই জানতেন যে এয়ার পকেটের সেবা দুজনের মধ্য শুধু একজন নিতে পারবেন।

জিসকো গার্সিয়া বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিই থাকব। আর গুইল্লেম সাহায্যের জন্য ওপরে যাবেন। মাসকার আমার চেয়ে পাতলা ধরনের হওয়ায় তাঁর বায়ু কম লাগছিল। পানির নিচে গুহায় যেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেশি থাকে, তেমন জায়গায় শ্বাস নেওয়ায় অভিজ্ঞতার কারণে আমি নিচে থাকার সিদ্ধান্ত নিই।’

গার্সিয়া ও মাসকার বিকল্পভাবে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সেখানে যাওয়ার কথা বর্ণনা করে গার্সিয়া বলছিলেন, ‘কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে গাড়ি চালানোর মতো ব্যাপার ছিল সেটি।’ তিনি বলেন, ‘মাসকার আমাকে রেখে যেতে চাইছিলেন না। কিন্তু আমাদের সামনে আর কোনো উপায় ছিল না।’

পাথর ও শিলাখণ্ড সংগ্রহে গিয়েই বিপদে পড়েন ডাইভার গার্সিয়া। ছবি: বিবিসি
পাথর ও শিলাখণ্ড সংগ্রহে গিয়েই বিপদে পড়েন ডাইভার গার্সিয়া। ছবি: বিবিসি

গার্সিয়ার সঙ্গে থাকা তিনটি টর্চলাইটের দুটো কাজ করছিল না। শেষটিরও ব্যাটারি প্রায় শেষ হয়ে আসছিল। গার্সিয়া বলছিলেন, ‘আমার ডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতার অনেক দিনের। কিন্তু কেন ওই দিন আমার এমন হলো আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু প্রথম সাত-আট ঘণ্টায় আমি বেশ আশাবাদী ছিলাম। কারণ ভাবছিলাম, মাসকার একটা কিছুর ব্যবস্থা করে ফেলবে। কিন্তু সময় যত যাচ্ছিল, ততই আশা হারাচ্ছিলাম। আমি ভাবছিলাম, গুইল্লেম বোধ হয় মারাই গেছে। আর আমি যে নিচে আছি, তা কেউ জানতেই পারবে না।’ এ সময় গার্সিয়া তাঁর ভালোবাসার মানুষটির কথা ভাবতে থাকেন।

গার্সিয়া বলছিলেন, ‘আমার ১৫ বছরের একটি ছেলে এবং নয় বছরের একটি মেয়ে আছে। আমি ভাবছিলাম, অল্প বয়সে তারা বাবাহারা হবে। আমার মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায় এবং কম অক্সিজেন থাকায় ঘুমানো অসম্ভব ছিল।’

একপর্যায়ে কিছু শব্দ শুনে ধড়ে প্রাণ আসে জিসকো গার্সিয়ার। কারণ, তাঁকে খুঁজতে আসছে—এটা ভাবতেই তাঁর মনটা ভালো হয়ে যায়। একপর্যায়ে গার্সিয়া একটি হেলমেট দেখতে পান। ওই সময়ের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘দেখতে পাই আমার পুরোনো বন্ধু বার্নেট ক্লামোরকে। আমি সেখানেই লাফিয়ে উঠি। বার্নেট জানতে চায় আমি কেমন আছি। সে ভাবছিল, আমাকে বোধ হয় আর জীবিত সে পাবে না।’

১৭ এপ্রিল জিসকো গার্সিয়াকে ওপরে উঠিয়ে আনা হয়। মাসকার সেখানে গার্সিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর সঙ্গে আলিঙ্গনের পরই গার্সিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তথ্যসূত্র: বিবিসি