মিয়ানমারে মৃত্যুঝুঁকিতে ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু

মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমাঞ্চলে রাখাইন রাজ্যে ৫ বছরের কম বয়সী ৮০ হাজারেরও বেশি শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। রাজ্যের গ্রামগুলোর বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত বছরের অক্টোবর মাসে রাখাইন রাজ্যে সীমান্ত পুলিশের এক চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে এ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে নামে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রাণ বাঁচাতে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।

সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা বহু রোহিঙ্গা অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমারের সেনারা তাঁদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নিপীড়ন চালিয়েছেন। গত মার্চে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংঘি লি স্পষ্ট করেই বলেন, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গারা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ শিকার। এর আগে গত নভেম্বরে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) বলেছিল, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা ‘খুব সম্ভবত’ মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার। আর ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনেও বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন সম্ভবত মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। ডব্লিউএফপির সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনা অভিযান সত্ত্বেও যেসব রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে পালাননি, তাঁরা খাদ্য-সংকটের মধ্যে দিন যাপন করছেন। অভিযানের সময় রাখাইনের মোংডুর বাসিন্দারাই সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এখানকার এক-তৃতীয়াংশ বাড়ির লোকজন চরম খাদ্য-সংকটে রয়েছেন। চরম খাদ্য-সংকট বলতে বাড়িতে কোনো খাবার না থাকা অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একবারও না খাওয়াকে বোঝানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এক-চতুর্থাংশ বাড়িতে মাত্র একজন করে প্রাপ্তবয়স্ক নারী রয়েছেন। এসব বাড়ির প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরা সেনা অভিযানের সময় পালিয়ে গেছেন। খাদ্য-সংকট সবচেয়ে বেশি এসব বাড়িতেই। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ২ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুই পর্যাপ্ত খাদ্য চাহিদার সর্বনিম্ন পরিমাণও পাচ্ছে না। এ ছাড়া ২ লাখ ২৫ লোকের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।

ডব্লিউএফপি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, ৫ বছরের কম বয়সী ৮০ হাজার ৫০০ শিশুর তীব্র পুষ্টিহীনতার কারণে আগামী বছরের পুরোটা সময় চিকিৎসার প্রয়োজন পড়তে পারে।