বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার

বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক কলেজে যৌন নির্যাতন বন্ধে শিক্ষার্থীদের প্রচারণা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক কলেজে যৌন নির্যাতন বন্ধে শিক্ষার্থীদের প্রচারণা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অর্ধেকেরও বেশি ছাত্রী যৌন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালে অন্তত একবারের জন্য হলেও ছাত্রীরা এই হয়রানির শিকার হন বলে দেশটির জাতীয় জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দেশটির মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের বিশেষ কোনো আয়োজনে দেশটির ৭ শতাংশ ছাত্রী যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরাই বেশি নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন বলে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশটির যৌন বৈষম্যবিষয়ক কমিশনার কেট জেনকিনস বলেন, জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ‘বিরক্তিকর’ ছবিটিই শুধু দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানির মুখোমুখি হওয়াটা এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর প্রভাবে তাঁদের জীবন ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। এর কারণে কারও জীবন নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রীরাই যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তি জোরপূর্বক বা কৌশলে কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে তা যৌন নির্যাতন। আর কারও দিকে নোংরা দৃষ্টি দেওয়া, অশালীন মন্তব্য করা ও অপ্রত্যাশিত যৌন আচরণ করাকে অস্ট্রেলিয়ায় যৌন হয়রানি বলা হয়।

কেট জেনকিনস বলেন, ‘যৌন নির্যাতনের শিকার প্রতি পাঁচজন ছাত্রীর একজন বলছেন, এসব ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর বা আবাসিক কলেজে ঘটেছে।’

জরিপে বলা হয়েছে, দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৫১ শতাংশ ছাত্রী যৌন নির্যাতন ও ৪৫ শতাংশ ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার। তাঁরা প্রায় সবাই ওই নির্যাতনকারীদের চেনেন। নির্যাতনকারীরা বেশির ভাগই পুরুষ সহপাঠী। মেয়েরাও আছেন এই দলে। গবেষণা দলের প্রধান গবেষক বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজ কর্তৃপক্ষকে এসব ঘটনা নিরসনে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পিটার হোজ বলেন, ‘জরিপের এই পরিসংখ্যান খুবই উদ্বেগজনক। জরিপে দেখা গেছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার। এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এই সমাজে আর হবে না।’

  • অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
  • আবাসিক কলেজে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা চারগুণ বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হন। বেশির ভাগ নির্যাতনকারী পরিচিত সহপাঠী বা সহপাঠিনী।
  • স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রীরা প্রভাষক বা শিক্ষকের দ্বারা অন্তত দুবার করে নির্যাতনের শিকার। গত বছর স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ২৭ শতাংশ ও বাইরের দেশ থেকে পড়তে আসা ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
  • ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে যৌন নির্যাতন ও হয়রানির ব্যাপারে স্পষ্ট তথ্য আছে।—সূত্র: গার্ডিয়ান