সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের সমালোচনা আসমা জাহাঙ্গীরের

আসমা জাহাঙ্গীর
আসমা জাহাঙ্গীর

পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর দেশটির রাজনীতিতে বছরের পর বছর ধরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং বিচার বিভাগের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। কেবল রাজনীতিকদের কেন জবাবদিহির আওতাভুক্ত করা হয়, তা নিয়ে তিনি বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন।

ইসলামাবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবে গত বৃহস্পতিবার আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বিদ্যমান আইনে রাজনীতিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সমালোচনার সুযোগ থাকলেও সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার সুযোগ নেই।

আসমা জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে তাদের দিকে আঙুল উঠবেই। তাদের অস্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা কলম হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানাব এবং জনগণের অধিকারের পক্ষে আমাদের উচ্চারণ থামাব না।’

প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনার সুযোগ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, সশস্ত্র বাহিনী যদি তথ্য প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়, করদাতাদের অর্থ নেওয়া তাদের বন্ধ করা উচিত।

আদালতের রায়ে নওয়াজ শরিফকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পদের অযোগ্য ঘোষণা করা প্রসঙ্গে আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের আওতায় ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ দেওয়া উচিত। প্রচলিত আইনে এ ধরনের রায়ের বিরুদ্ধে কেবল রিভিউ আবেদন করার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে পার্লামেন্টকে আইন সংশোধন করতে হবে।

আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যখনই স্বতঃপ্রবৃত্ত নোটিশ দেন এবং একটা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, তিরস্কৃত দলটি আপিলের সুযোগ পায় না এবং কেবল একটি রিভিউ পিটিশন দিতে পারে। বিচার বিভাগ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দেয়, কিন্তু কখনোই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার উৎসাহ দেখায়নি। সামরিক আদালত গঠনের সুযোগ দিয়ে পার্লামেন্ট সাংঘাতিক একটা ভুল করেছে, কিন্তু বেসামরিক আদালত ঠিকমতো কার্যক্রম চালাচ্ছে না—এমন কারণ দেখিয়ে সামরিক আদালতকে সুযোগ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আরও বেশি মারাত্মক ভুল করেছেন।

আসমা জাহাঙ্গীর আরও বলেন, যে বিচারক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে ‘গডফাদার’ বলে মন্তব্য করেছেন, তাঁর হয়তো বিবেচনায় ছিল না যে নওয়াজ শরিফ আগেও দুবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হয়েছিলেন।

অর্থ পাচারের ঘটনায় নওয়াজ শরিফের পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য গঠিত যৌথ তদন্ত দলে (জেআইটি) গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গ টেনে আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে যদি আইএসআইসহ সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, বিচারকদের কেমন লাগবে? জেআইটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর দাবি করা হয়েছিল, নওয়াজের দল পিএমএল-এন ‘সিসিলির মাফিয়া’। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদালত আসল মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কখনো রায় দেননি; ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধেও কোনো রুল পর্যন্ত দেননি।

সান্ত্বনা পেতে নওয়াজ শরিফকে জনগণের কাছে যাওয়ার এবং রাজপথে নেমে জনসভা করার পরামর্শ দিয়েছেন আসমা জাহাঙ্গীর। নির্দিষ্ট কিছু মহলের স্বার্থের জন্য চোরাচালানের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ করে প্রতিবাদী মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, চোরাচালানের ওপর নির্ভরশীলতার পরিবর্তে পাকিস্তানের এখন প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করা উচিত।

যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান কাশ্মীর দখল করতে পারবে না উল্লেখ করে আসমা জাহাঙ্গীর বিষয়টি মীমাংসার জন্য ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানান।