বিজেপি এখন আরও ক্ষমতাধর

প্রত্যাশিতভাবে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভের পর ক্ষমতায়নের বৃত্তটি ভারতের শাসক দল বিজেপি এই প্রথম প্রায় সম্পূর্ণ করে দিল। সংসদীয় ভারতের ইতিহাসে বিজেপির এ সাফল্যও এই প্রথম।

 ‘প্রায়’ শব্দটি ব্যবহার করতে হলো এই কারণে যে, ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর গরিষ্ঠতা পেতে এখনো বেশ দেরি, যদিও দুই শিবিরের ফারাক ক্রমশ কমে আসছে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা ছাড়াও দেশের রাজ্য বিধানসভাগুলোর সদস্যরা ভোট দেন। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার থাকে শুধুই সংসদের দুই কক্ষের সদস্যদের। সেই নিরিখে লোকসভা ও রাজ্যসভার মোট সদস্যের ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে বিজেপি প্রার্থী ভেঙ্কাইয়া নাইডুর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি। লোকসভার ৫৪৫ সদস্যের মধ্যে বিজেপি ও এনডিএর রয়েছে ৩৩৮ জন সদস্য, ২৪৫ সদস্যের রাজ্যসভায় ইউপিএর চেয়ে এনডিএর শক্তি কম হলেও পার্থক্য দ্রুত কমছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংযুক্ত জনতা দল ও বিজু জনতা দল বিজেপির প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন করলেও গতকাল উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তারা সম্মিলিত বিরোধী প্রার্থী গোপালকৃষ্ণ গান্ধীকে সমর্থন দেয়। কিন্তু তাতেও ভেঙ্কাইয়া নাইডু হেলায় জিতেছেন।

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গতকাল ৯৮ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভেঙ্কাইয়া ৫১৬ এবং গোপালকৃষ্ণ ২৪৪ ভোট পেয়েছেন।

এই জয়ের ফলে ক্ষমতায়নের বৃত্তটি বিজেপি এই প্রথম প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলল। এর আগে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলেও রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভার স্পিকার, এই চার পদ কখনো একই সঙ্গে বিজেপির দখলে ছিল না।

উপরাষ্ট্রপতিকে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব সামলাতে হয়। ভেঙ্কাইয়া নাইডু নির্বাচিত হওয়ায় এখন রাজ্যসভা পরিচালনার ভার বর্তাবে তাঁরই ওপর। এর ফলে ভারতীয় সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভা পুরোপুরি চলে আসছে বিজেপির নিয়ন্ত্রণে। হামিদ আনসারি ২০০৭ সালে উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ২০১২ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ১২ বছর পর ১০ আগস্ট তিনি অবসর নিচ্ছেন।

পূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে বিজেপির বাকি থাকছে শুধু রাজ্যসভার গরিষ্ঠতা। গত শুক্রবারই সেই লক্ষ্যে বিজেপি একধাপ এগিয়ে যায়। মধ্যপ্রদেশের উপজাতি নেতা সম্পথিয়া উইকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে রাজ্যসভায় শপথ নেন। এর ফলে রাজ্যসভায় এই প্রথম বিজেপি একক গরিষ্ঠ দল হিসেবে কংগ্রেসকে টপকে গেল। সংসদীয় ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কংগ্রেস রাজ্যসভায় একক গরিষ্ঠতা হারাল। অটল বিহারি বাজপেয়ির আমলেও বিজেপির সদস্যসংখ্যা কখনো ৫০ পেরোতে পারেনি।

এই জয়ের ফলে রাজ্যসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ৫৮, কংগ্রেসের থেকে একটি বেশি। আগামী মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাটের মোট ৯টি রাজ্যসভা আসনে ভোট। পশ্চিমবঙ্গের ৬টি আসনের মধ্যে ৫টি জিতবে তৃণমূল কংগ্রেস, অন্যটি জিতবে কংগ্রেস। গুজরাটের ৩টি আসনের ২টিতে বিজেপির দুই প্রার্থী দলীয় সভাপতি অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির জয় নিশ্চিত। তৃতীয় আসনে ক্ষুরধার লড়াই হবে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা আহমেদ প্যাটেলের সঙ্গে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া সাবেক কংগ্রেসি বলবন্ত সিং রাজপুতের। কংগ্রেস এই আসনে জিতলেও রাজ্যসভায় তাদের চেয়ে বিজেপি এক আসনে এগিয়ে থাকবে। বিজেপির আসন হবে ৬০, কংগ্রেসের ৫৯।

চূড়ান্ত ক্ষমতায়নের জন্য বিজেপির প্রয়োজন রাজ্যসভাতেও গরিষ্ঠতা পাওয়া। আগামী বছর, ২০১৮ সালে সেই লক্ষ্যে বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে যাবে। মোট ৫৭ আসনে আগামী বছর ভোট। তার মধ্যে রয়েছে উত্তর প্রদেশের ১০টি আসন, যার মধ্যে বিজেপি ৯টি আসন পাবে।