ব্রিজিতের কাজ কী, ফার্স্ট লেডি লাগবে কেন?

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাখোঁ। ছবি: রয়টার্স
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাখোঁ। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সে ফার্স্ট লেডির কোনো আনুষ্ঠানিক পদমর্যাদা নেই। তাই ফার্স্ট লেডির জন্য সুনির্দিষ্ট পদমর্যাদা নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। যত সহজে কাজটি হবে বলে তিনি ধারণা করেছিলেন, বিষয়টি তত সহজ নয়। বরং বেশ কঠিন। আর এ নিয়ে ইতিমধ্যে দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে বিতর্ক। বিতর্কের বিষয়—ফ্রান্সে ফার্স্ট লেডি লাগবে কেন?

প্রথম বাধাটা এসেছে জনগণের কাছ থেকে। দুই লাখেরও বেশি ফরাসি অনলাইন আবেদনে সই করে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাখোঁকে ফার্স্ট লেডির আনুষ্ঠানিক পদমর্যাদা দেওয়া উচিত নয়। এই অনলাইন সই সংগ্রহবিষয়ক উদ্যোগের উদ্যোক্তা শিল্পী থেরি পল ভেলেত্তি বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধানের স্ত্রীর জন্য জনগণের করের অর্থ বরাদ্দ করার কোনো কারণ নেই।’

ফরাসি গণমাধ্যম বলছে, ফার্স্ট লেডির ভূমিকা কী হবে, তা নির্ধারণে কাজ চলছে। যদিও প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, ফরাসি ফার্স্ট লেডি এলিসি প্রাসাদে একটি অফিস পেয়ে থাকেন। সেই অফিসের কাজকর্ম দেখভালে দু-একজন সহকারী ও নিরাপত্তাকর্মীর সুবিধা পান। ফার্স্ট লেডির কাছে প্রত্যাশা থাকে, তিনি স্বামীর কাজে সহযোগিতা করবেন এবং সেবামূলক কাজে যুক্ত থাকবেন। এমন রীতি থাকার পরও কেন নতুন করে ফার্স্ট লেডির ভূমিকা নির্ধারণের প্রয়োজন হলো, সে প্রশ্ন তুলেছে গণমাধ্যম।

নির্বাচনী প্রচারের সময়ই ইমানুয়েল ম্যাখোঁ টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি চান ফরাসি ফার্স্ট লেডির সুনির্দিষ্ট ভূমিকা থাকুক। কারণ, যে মানুষটা রাষ্ট্রপ্রধানের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করেন, তাঁর অবশ্যই স্বীকৃতি থাকা উচিত। আর এর জন্য জনগণের করের অর্থ ব্যয় হবে না বলেও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। তিনি শুধু চান, ফার্স্ট লেডি ইস্যুতে ফরাসিরা যে ‘ভণ্ডামি’ করে, তার অবসান হোক।

তবে ফার্স্ট লেডির ভূমিকা বিষয়ে এত স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি ইমানুয়েল ম্যাখোঁর। তাঁর বিরুদ্ধে বরং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রক্ষণশীল দলের ফ্রাঁসোয়া ফিলোঁ অভিযোগ করেছেন, সামান্য কিছু কাজ করছেন কি করছেন না, এ জন্য ফার্স্ট লেডির পেছনে হাজার হাজার ইউরো খরচ করছেন প্রেসিডেন্ট। জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না এটা।

ইমানুয়েল-ব্রিজিত জুটি নির্বাচনের সময় থেকেই সাড়া ফেলেন দেশে-বিদেশে। তাঁদের প্রেমকাহিনি মানুষের মন জিতে নেয়, নজর কাড়ে গণমাধ্যমেরও। এমন হবেই না বা কেন! একসময় যার নাটকের শিক্ষিকা ছিলেন, এখন তাঁরই ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত। ১৭ বছর বয়সে ইমানুয়েল প্রেমে পড়েন ব্রিজিতের। সাহস দেখিয়ে সে কথা জানিয়ে দেন তাঁকে। বলেন, ‘আমি তোমাকে একদিন বিয়ে করব, দেখো।’ ইমানুয়েল কথা রাখেন। বয়সের ২৫ বছরের ব্যবধান অগ্রাহ্য করে ২০০৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ইমানুয়েল-ব্রিজিত।

হঠাৎ করে ইমানুয়েল-ব্রিজিতের প্রতি ভালোবাসায় ভাটা পড়ল কেন? বিষয়টা স্পষ্ট করার জন্য অনলাইন আবেদন কর্মসূচির উদ্যোক্তা থেরি পল ভেলেত্তি বলেন, ‘এটা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনা নয়। ব্রিজিতের প্রতি আপত্তিকর ও মানহানিকর সব ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে আমরা। আর তাঁর দক্ষতা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো সংশয়ও নেই। আমরা শুধু ফার্স্ট লেডির পেছনে জনগণের অর্থ অপচয়ের বিপক্ষে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অলিভার বলেন, ফার্স্ট লেডির মর্যাদা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের কোনো মানে নেই। কারণ, জনগণ শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন; কোনো যুগলকে নয়। জনগণের অর্থ প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যয় হবে, কিন্তু ফার্স্ট লেডির জন্য কেন?

ফার্স্ট লেডির ভূমিকা কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে গত বছর ব্রিজিতের দেওয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে ধারণা পাওয়া যায়। ব্রিজিত তখন বলেছিলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি তরুণদের জানি। তাই আমার লড়াইটা হবে শিক্ষা বিষয়ে।’ রুচিশীল আর মার্জিত ব্যক্তিত্বের ব্রিজিতের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৩ এপ্রিল। তিনি শিক্ষিকা হিসেবে ফরাসি ও লাতিন ভাষা শেখানোর পাশাপাশি নাটকের ক্লাসও নিতেন। কাছের মানুষের কাছে তিনি ‘বিবি’ নামে পরিচিত। ঘনিষ্ঠরা এই ফার্স্ট লেডিকে আন্তরিক, অমায়িক ও শিক্ষিত বলে জানেন। দ্বিতীয় স্বামী আর প্রথম সংসারের তিন সন্তানকে নিয়ে সুন্দর পারিবারিক জীবন কাটাতে ভীষণ পছন্দ করেন তিনি। তাঁর বড় ছেলে প্রকৌশলী এবং দুই মেয়ের একজন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ, আরেকজন আইনজীবী।

এক তথ্যচিত্রে ব্রিজিত বলেছিলেন, ‘আমি যখন কোনো কিছুর জন্য মনস্থির করি, আমি সেটা করি।’ তিনি ফার্স্ট লেডির আনুষ্ঠানিক মর্যাদা পেতে মনস্থির করেছেন কি না, সেটা জানা যায়নি। যদি করে থাকেন, তবে নিশ্চয় সেটা অর্জন করবেন। আর ভালোবাসা প্রমাণের দৌড়ে এগিয়ে থাকা ইমানুয়েল স্ত্রীর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘সে আমার জন্য সব ছেড়েছে।’ এখন দেখার বিষয়, ফার্স্ট লেডি নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতে ব্রিজিতের জন্য তিনি কী ছাড়েন।

বিবিসি ও এএফপি অবলম্বনে তপতী বর্মন