দেশ বিভাগে এলোমেলো দুজনের ভালোবাসা

মুসলিম মেয়ে ইসমাত ও হিন্দু ছেলে জিতু। কাশ্মীরে অবকাশযাপনে গিয়ে জিতুর সঙ্গে ইসমাতের পরিচয় হয়। তাঁরা দ্রুত প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ এলোমেলো করে দেয় ওই দুই তরুণ-তরুণীর ভালোবাসা।

ভারত বিভাগের পর তাঁরা দেখেন, দুজন দুই দেশের নাগরিক। জিতুর জন্য প্রায় পাগলের মতো হিন্দু শরণার্থীশিবিরে পালিয়ে যান ইসমাত। ভারতের অমৃতসরে যেখানে অন্য শরণার্থীদের রাখা হয়েছিল, সেখানে ইসমাতকে পাঠানো হয়। হিন্দু সেজে সেখানে অবস্থান করেন ইসমাত। তিনি যে হিন্দু নন—এ বিষয়ে কেউই সন্দেহ প্রকাশ করেনি।

ভারতে আসার চার দিনের মধ্যে ইসমাত জিতুর ঠিকানা খুঁজে পান এবং তাঁকে চিঠি দেন। এরপর ইসমাতের সঙ্গে দেখা করার জন্য শরণার্থীশিবিরে ছুটে যান জিতু। তবে তাঁদের এ পুনর্মিলনে সামাজিকভাবে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এ কারণে জিতুর বাবা-মা কালক্ষেপণ না করে স্বর্ণমন্দিরে নিয়ে দ্রুত তাঁদের বিয়ে দেন।

এদিকে ইসমাতের পরিবার মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ইসমাতকে অপহরণ করা হয়েছে—এমন অভিযোগ করে তারা এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সাহায্য চায়। পরবর্তী সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভারত বিভাগের সময় অপহৃত কয়েক হাজার নারীকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চুক্তি হয়। ভারতের সমাজকর্মী কমলা প্যাটেল এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ইসমাতকে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় জিতু হতাশ হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে সাহায্য করার জন্য তিনি কমলা প্যাটেলকে অনুরোধ করেন।

কিন্তু ইসমাতকে যদি ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে পুরো কার্যক্রমই ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই কামলা প্যাটেল বুঝিয়ে ইসমাতকে এক সপ্তাহের জন্য লাহোরে যেতে রাজি করান। লাহোরে পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে ইসমাতের থাকার কথা বলা হয়। পরে ইসমাত লাহোরে যান। ওই কমিশনারের বাড়িতে ইসমাতের সঙ্গে তাঁর বাবা-মা দেখা করেন। চার দিন পর ভারতের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ইসমাতের বাবা-মা তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন।

এরপর সবকিছু বদলে যায়। সবকিছু শোনার পর জিতু লাহোরে ছুটে যান। তিনি ইসমাতের খোঁজ করতে থাকেন ব্যাকুল হয়ে। এদিকে পাকিস্তানে থাকাটা জিতুর জন্য নিরাপদ ছিল না। এরপরও ইসমাতকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন তিনি। প্রাণের মানুষকে খুঁজতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। একপর্যায়ে জিতু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন।

পাঁচ বছর পর কমলা প্যাটেল ভারতে একটি ট্রেনে জিতুর দেখা পান। জিতুর ত্বক তখন হলুদ হয়ে গিয়েছিল। তিনি তখনো ছিলেন একা।

দেশ বিভাগের সময়কার স্মৃতি নিয়ে কামলা প্যাটেলের গ্রন্থ ‘টর্ন ফ্রম দ্য রুটস’ থেকে গল্পটি প্রকাশ করেছে বিবিসি।

ভাষান্তর: কৌশিক আহমেদ