কে এই 'ধর্মগুরু'?

ভারতে ধর্ষণের মামলায় ‘ধর্মগুরু’ রাম রহিম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাঁর ভক্তদের তাণ্ডবে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর অন্তত আড়াই হাজার ভক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। আজ ২০০ গাড়ির বহর নিয়ে তিনি আদালতে আসেন। তাঁকে হেলিকপ্টারে করে কারাগারে নেওয়া হয়। কে এই ‘ধর্মগুরু’।

কথিত এই ধর্মগুরুর পুরো নাম গুরমিত রাম রহিম সিং (৫০)। সংক্ষেপে রাম রহিম নামেই পরিচিত। ১৯৬৭ সালের ১৫ আগস্ট রাজস্থানের গঙ্গানগর জেলার শ্রী গুরুসর মোদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। ব্যক্তিজীবনে রাম রহিম তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক। ভারতে যে ৩৬ জন ব্যক্তি জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা পান, রাম রহিম তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন।

রাম রহিমের জনপ্রিয়তা রয়েছে দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের মধ্যে। রক্তদান শিবির, বৃক্ষরোপণের মতো কাজ করে থাকেন নিয়মিত। হাসপাতাল স্থাপন ও যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের মতো কাজ করেন। ২০১০ সালে তিনি একটি গণবিবাহের আয়োজন করেন। সেখানে তাঁর এক হাজারের বেশি অনুসারী যৌনকর্মীদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ ধরনের কিছু কাজ করে তিনি নিজেকে সমাজসংস্কারক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইটে তাঁকে ‘আধ্যাত্মিক গুরু, মানবদরদি, বহুমুখী গায়ক ও বহুমুখী ক্রীড়াবিদ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়াও বিশ্বজুড়ে রাম রহিমের প্রায় ছয় কোটি ভক্ত রয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে বেশ। সব সময় কেতাদুরস্ত হয়ে থাকতে পছন্দ করেন রাম রহিম। নানা ধরনের অলংকারও ব্যবহার করেন। প্রায় অর্ধ ডজন বাদ্যযন্ত্র বাজাতেও পারদর্শী তিনি। এ জন্য অনেকে তাঁকে ‘রকস্টার বাবা’ও বলে থাকেন।

রাম রহিমের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। তাঁর বিরুদ্ধে মোট তিনটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ২০০২ সালে সিরসার এক সাংবাদিক রাম চন্দ্র ছত্রপতিকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই একই বছরে ডেরার ম্যানেজার রঞ্জিত সিংহকে খুনের অভিযোগও ওঠে। এ ছাড়া ২০০২ সালে ভারত সরকারের ফেডারেল পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড এবং ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত করে।
রাম রহিম তিনটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। সেগুলো হলো ‘এমএসজি: দ্য মেসেঞ্জার’, ‘এমএসজি ২: দ্য মেসেঞ্জার’ এবং ‘এমএসজি: দ্য ওয়ারিয়র লায়ন হার্ট’।

সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি