যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ-পরবর্তী অভিবাসন পরিকল্পনা ফাঁস

বিচ্ছেদের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিকদের অভিবাসন ঠেকাতে যুক্তরাজ্য যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা ফাঁস হয়ে গেছে। ৮২ পৃষ্ঠার গোপন নথিতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (হোম অফিস) ইইউ নাগরিকদের প্রবেশাধিকার ঠেকানোর পরিকল্পনা চিত্রিত করে। একটি গোপন সূত্র ইংরেজি দৈনিক গার্ডিয়ানের হাতে ওই নথি তুলে দিয়েছে।

মঙ্গলবার এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ইইউ নাগরিকদের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।

অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় রেখে যারা ব্রেক্সিট (ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) কার্যকর চান, তারা ওই গোপন পরিকল্পনায় বেজায় চটেছেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে মঙ্গলবার শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। তবে অভিবাসনবিরোধী ও ব্রেক্সিটপন্থী রাজনীতিকেরা সরকারের কঠোর নীতির পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। আর ইইউ’র পক্ষে ব্রেক্সিট বিষয়ক সমঝোতা কমিটির সদস্য জার্মান রাজনীতিক এলমার ব্রোক বলেছেন, ফাঁস হওয়া পরিকল্পনায় ইইউ নাগরিকদের অধিকার নিয়ে কোনো বিবেচনাবোধ নেই। যুক্তরাজ্যের এমন অবস্থান ব্রেক্সিট সমঝোতার ক্ষেত্রে অবিশ্বাস ও আস্থার সংকটকে আরও জোরালো করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গত মাসে এই খসড়া নীতি চূড়ান্ত করা হয়, যা ‘অতি স্পর্শকাতর’ (এক্সট্রিমলি সেনসেটিভ) হিসেবে চিহ্নিত। খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়া মাত্রই ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করা হবে। বিশেষ করে অদক্ষ শ্রমিকদের প্রবেশ ঠেকিয়ে ব্রিটিশদের কাজের সুযোগ বাড়ানো হবে। অদক্ষ কর্মীদের কর্ম ভিসা দেওয়া হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের। আর দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসার মেয়াদ হবে তিন থেকে পাঁচ বছর। তাদের যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ সীমিত করতেই এই ব্যবস্থা।

এতে বলা হয়, ইইউ নাগরিকদের পরিবার আনার ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো সীমারেখা নেই, যে কাউকে তারা পরিবারের সদস্য ঘোষণা করে আনতে পারেন। তাই পরিবারের সদস্যের একটা সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে ব্রেক্সিটের পর পরিবারের সদস্যকে (স্বামী, স্ত্রী বা সন্তান) যুক্তরাজ্যে আনতে হলে ইইউ নাগরিকদের বছরে ১৮ হাজার ৬০০ পাউন্ড আয় দেখাতে হবে। বর্তমানে পরিবার আনতে ব্রিটিশ নাগরিকদের ওই পরিমাণ আয় দেখাতে হলেও ইইউ নাগরিকদের তা করতে হচ্ছে না।

ব্রেক্সিটের পর ইইউ নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশকালে পাসপোর্ট পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন) সংরক্ষণের কথা বলা রয়েছে পরিকল্পনায়।

মাসখানেক আগে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড ব্রেক্সিট পরবর্তী অভিবাসননীতি প্রণয়নে সরকারকে পরামর্শ দিতে স্বাধীন সংস্থা ‘ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিশন’কে (এমএসি) নিয়োগ দেন। ডিসেম্বর নাগাদ এমএসি মতামত জানানোর কথা। এখন গোপন নথি ফাঁস হওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান লেবার দলীয় রাজনীতিক ইভেট কুপার প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার যদি গোপনে সব পরিকল্পনা করেই ফেলে তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমএসির কাছে পরামর্শ চাইলেন কেন? ইভেট কুপার সরকারের নেওয়া অভিবাসন নীতিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন। সরকারের এমন কঠোর অবস্থান ফাঁসের ফলে ব্রেক্সিট সমঝোতায় ইইউর বাকি ২৭ দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রতিশোধপরায়নমূলক আচরণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা।

২০১৬ সালের ২৩ ‍জুন অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ইইউর সদস্যপদ ছাড়ার পক্ষে রায় দেয়। ইইউ নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করাই ছিল এমন রায়ের অন্যতম কারণ। কিন্তু ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করলে ইইউর একক বাজারের সুবিধাও হারাবে যুক্তরাজ্য। বাণিজ্য দূরত্ব তৈরি হতে পারে ইইউভুক্ত প্রতিবেশী বাকি ২৭ দেশের সঙ্গে। এ কারণে অভিবাসন ও অর্থনৈতিক স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় করে ব্রেক্সিট কার্যকর করতে চাপ আছে যুক্তরাজ্যে।