অং সান সু চির ক্ষমতা আসলে কতটুকু?

অং সান সু চি
অং সান সু চি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করা হচ্ছে। চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর নিষ্ঠুর নৃশংসতা। প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে নতুন করে লাখো রোহিঙ্গা। এতে করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় দিন দিন জোরালো হচ্ছে। কারণ সু চি তাঁর সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, উগ্রবাদ মোকাবিলাতেই রাখাইনে এই পদক্ষেপ। প্রসঙ্গত, গত মাসে মিয়ানমারের তল্লাশি চৌকিতে যুগপৎ হামলার জেরে উগ্রপন্থীদের ধরার নামে রাখাইনে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান শুরু করে দেশটির সরকার।

অং সান সু চি মিয়ানমারের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ঐতিহাসিক জয়লাভ করে। এতে দেশটির অর্ধশত বছরের সেনাশাসনের ইতি ঘটে। অং সান সু চি তাঁর দল ও মন্ত্রিসভায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর বেশির ভাগই নিয়ে থাকেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট থিন কিউকেও সু চির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু দেশটির সংবিধানটি সামরিক সরকারের আমলে করা হওয়ায় পার্লামেন্টে এক-চতুর্থাংশ আসন এখনো রয়ে গেছে সশস্ত্র বাহিনীর অধীনেই। এ ছাড়া সেনাবাহিনী দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণও করে। এগুলো হলো স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ মিয়ানমারের পুলিশও নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী। দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারকে সাসপেন্ড করার ক্ষমতা আছে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের, যেটির ১১টি আসনের ছয়টিই আবার সেনাবাহিনীর নিয়োগকৃত। মিয়ানমারের সাবেক সামরিক কর্তাব্যক্তিদের অনেকে বর্তমানে রয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি খাতের উচ্চ অবস্থানে। দেশটির বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ১৪ শতাংশ, যা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা—এ দুইয়ের যৌথ বাজেটের চেয়ে কম।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রধানদের দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে অভিহিত করা হয়। স্থানীয় বৌদ্ধদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ঝামেলাও বেশ পুরোনো। রোহিঙ্গাদের চলাফেরা কিংবা কাজের সুযোগ বরাবরই সীমিত। বলা হচ্ছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে যেসব খবর আসছে সেগুলো ভুল তথ্যে ভরা। আরও বলা হচ্ছে, রাখাইনে ঘটা ঘটনাবলির ওপর খুব কমই প্রভাব আছে সু চির। কারণ হলো রাখাইনে মূল ক্ষমতা রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। আর সু চি যদি রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নেন তবে দেশটির সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও ক্ষেপে যেতে পারেন। এ ছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যেহেতু ‘ক্ষমতায়’ থাকার অভ্যাস পুরোনো, তাই সেনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও রয়ে যায়। আর দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারকে সেনাবাহিনী সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে, সে ক্ষেত্রে সু চির রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঝুঁকি কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নও থেকেই যায়।