আসামে প্রণাম বিতর্ক

বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য ‘প্রণাম’-এর ব্যবস্থা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে ভারতের বিজেপি শাসিত অসম সরকার। শুক্রবার বিধানসভায় বিলটি পাস হতেই সমালোচনা ঝড় বইতে শুরু করেছে। আসামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর আঘাতও বলার চেষ্টা করছেন অনেকে।

আসাম সরকারের নতুন আইন ‘প্রণাম’। অর্থমন্ত্রী হীমন্ত বিশ্বশর্মার আনা বিলটির আসল নাম দ্য আসাম এমপ্লয়িজ প্যারেন্টস রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড নর্মস ফর অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড মনিটরিং বিল, ২০১৭। শুক্রবার পাস হওয়া এই আইনে বলা হয়েছে, আসামের সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের মা-বাবার দেখভাল করতে বাধ্য। অন্যথায় তাঁদের বেতনের ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিলটি পাস হলেও সমালোচনা এখনো চলছে। রোববার রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রণাম অসমিয়া সংস্কৃতির প্রতি আঘাত। কর্মচারীদের ব্যক্তিগত জীবনেও হস্তক্ষেপের শামিল।’

প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতার মতে, ‘অসমীয়া সমাজ শুধু মা-বাবার দেখভালের শিক্ষা দেয় না, কাকা-কাকিমার শুশ্রূষা করার দায়ভারও পড়ে ছেলেমেয়েদের ওপর। প্রণাম সেই প্রথার অবলুপ্তি ঘটাতে পারে।’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, বেশির ভাগ অসমীয়াই মন থেকে মা-বাবাকে আদরযত্ন করেন। তাঁদের অপমান করছে প্রণাম, এমনটাও মনে করেন তিনি।

তবে তরুণ গগৈ যা-ই বলুন না কেন, রাজ্য সরকার বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও ‘প্রণাম’-এর আওতায় আনতে চায়। সাফ জানালেন অর্থমন্ত্রী হীমন্ত বিশ্বশর্মা। রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রী-বিধায়ক থেকে শুরু করে বেসরকারি কর্মচারী—সবাইকেই প্রণামের আওতায় আনা হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতো সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রণাম নিয়ে দ্বিমত লক্ষ করা যায়। এমনকি সরকারি কর্মীরাও অনেকে প্রণামকে সমর্থন করলেও বিরোধী শিবিরেও সংখ্যাটাও মন্দ নয়। প্রথম পক্ষের যুক্তি, বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবার সুরাহা হবে। বেতনের ১০ শতাংশ তো পাবেনই। অন্য পক্ষের মত, বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে এমনিতেই মা-বাবার যত্ন নেন। আইন করে কোনো লাভ নেই। কারণ বেতনের ১০ শতাংশে ওষুধ বা চিকিৎসার খরচ ওঠে না। তা ছাড়া মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ককে টাকার অঙ্কে মাপতে নারাজ অনেকেই। ফলে বিতর্ক চলছে।