কিশোরীরা না জেনেই যৌন সম্পর্কে জড়াচ্ছে!

ভালো করে না বুঝে, না জেনেই কিশোরীরা যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। আর যারা এই বয়সে বিষয়টি নিয়ে একটু বুঝতে চায়, তারা পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকছে। যার ফল ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক স্কুলশিক্ষক বিবিসির ফ্যামিলি অ্যান্ড এডুকেশন অনুষ্ঠানের এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারে ২৪ বছর বয়সী এই শিক্ষক বলেছেন, তিনি কিশোর বয়সের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এমন কিছু গল্প শুনে বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন।

ওই শিক্ষক বলেন, ‘কিশোরেরা যৌনতা নিয়ে যে আলোচনা করে, তাতে বোঝা যায়, এ বিষয়ে তাদের জানার পরিধি অনেক কম। শারীরিক সংসর্গের মধ্যে যে দুজন মানুষের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হয়, এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। এ ছাড়া নিজের শরীরের যে মর্যাদা রয়েছে, তা কিশোরীদের শেখানো হয় না। এ কারণে তাদের শরীরকে কেউ ব্যবহার করলেও তারা তা বুঝতে পারে না।’

যুক্তরাজ্যের ওই শিক্ষক বলেন, ‘১৪ বছর বয়সী এক ছাত্রী আমাকে বলেছিল, এক ছেলের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কের সূত্রে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল তাদের। এর কয়েক দিন পরেই ওই ছেলে সম্পর্ক ভেঙে ফেলে। শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার পরও প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে ফেলায় ওই ছাত্রী খুব কষ্ট পেয়েছিল।’

সাক্ষাৎকারে শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় না, ১৪ বা ১৬ বছর বয়সী কোনো কিশোরী সঠিকভাবে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে। তারা আনন্দটাও উপভোগ করতে পারে না। তারা শুধু শরীরী ব্যাপারটার মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তারা মনে করে, তার সঙ্গে যে এই বয়সে শারীরিক সম্পর্ক করা হচ্ছে, এটাই সম্মানের বিষয়। আর ওই কিশোর বা ছেলেটি যদি একটু জনপ্রিয় বা আকর্ষণীয় হয়, তাহলে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো বিশাল কিছু মনে করে অনেকেই। এই কিশোরীরা নিজেদের ব্যাপারেও সচেতন নয়। একসময় তারা পেছনের দিকে তাকিয়ে বুঝবে, তারা কত বড় ভুল করেছিল। তাদের যে স্রেফ ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটাও তারা বুঝবে। কিশোরী বয়সে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি যত সহজভাবে তারা নিয়েছিল, পরবর্তী সময়ে এই ব্যাপারটি তাদের গভীরভাবে ভোগাবে।’

‘এটা যে ঠিক নয়, তা কিশোরীদের বোঝাতে হবে। তারা যে ব্যবহার হচ্ছে, সেটাও বোঝাতে হবে। তাদের ‘‘না’’ বলার অধিকার আছে। আর ‘‘না’’ বলতে পারলে মানসিক চাপমুক্ত থাকা যায়। ছেলেরা কিশোরীকে নিয়ে কী ভাবছে, সেটাই মুখ্য ধরে নিচ্ছে তারা। যদি কোনো ছেলে কোনো কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে যেতে না চায়, তাহলে ওই কিশোরী মনে মনে ভাবে, সে হয়তো আকর্ষণীয় নয়।’ এভাবেই বলছিলেন ওই শিক্ষক।

সাক্ষাৎকারে বলা হয়, ‘স্কুলগুলোতে যে যৌন শিক্ষা দেওয়া হয়, তাতে কেবল জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়েই শিক্ষা দেওয়া হয়। সেখানে পারস্পরিক সম্পর্ক ও মর্যাদাবোধ নিয়ে কিছু শেখানো হয় না। এই কিশোর-কিশোরীরা যৌন সম্পর্কিত অসুখের বিষয়ে জানে, কনডম ব্যবহার জানে। কিন্তু সত্যিকার যৌন সম্পর্কের বিষয়টাই তারা জানে না। আমার ধারণা, এসব শিক্ষার্থীকে জন্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষকেরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট ক্লাস নিয়েও সেসব সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন। তবে অনেক শিক্ষক যৌনতা নিয়ে কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন।’

এভাবে একটি রোগাক্রান্ত প্রজন্মের সৃষ্টি হচ্ছে দাবি করে ওই শিক্ষক বলেন, নতুন এই প্রজন্ম একটি রোগাক্রান্ত প্রজন্ম। যাদের কাছে শারীরিক সম্পর্কের কোনো মর্যাদা নেই। তিনি বলেন, ‘আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখনো ওয়েব ক্যাম ও যৌন বার্তা নিয়ে ঝামেলার কথা শুনতাম। কিন্তু ছেলেদের কখনো মেয়েদের নিয়ে এমন খোলামেলা কথা বলতে শুনিনি। পরিস্থিতিটা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এ জন্য আমরা পর্নোগ্রাফিকে দোষ দিতে পারি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতাকেও দায়ী করা যায়।’