মাসিক নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে শেখাতে হবে

পিরিয়ড নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করছেন নিনা, ক্লেয়ার ও ইনেস। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
পিরিয়ড নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করছেন নিনা, ক্লেয়ার ও ইনেস। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মেয়েদের মাসিক বিষয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে শেখানো উচিত। কারণ, বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা না করাটাই বরং ক্ষতিকর বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি বেসরকারি সংস্থা।


বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নামের ব্রিটিশ বেসরকারি সংস্থাটি সম্প্রতি মেয়েদের মাসিক নিয়ে স্কুল-শিক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। এই জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ১৪ থেকে ২১ বছর বয়সী এক হাজার ছেলেমেয়ের ওপর জরিপটি চালায়। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মেয়েই জানিয়েছে, তারা মাসিক নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে বিব্রত বা লজ্জাবোধ করে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের নারী অধিকার প্রধান কেরি স্মিথ বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখনো মাসিককে গোপন ও নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পিরিয়ড নিয়ে ছেলেমেয়েরা তেমন কিছুই জানে না। এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা না করাটাই ক্ষতিকর।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি সাতজনের একজন মেয়ে জানিয়েছে যে তাদের যখন প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়, তখন তারা জানত না কী হচ্ছে।

নিনা নামের ১৮ বছরের এক তরুণী বলেন, ১২ বছর বয়সে তাঁর প্রথম পিরিয়ড হয়। সে দিনটির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘রক্ত দেখে ভয়ে আমি অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। তখন মা আমাকে একটি স্যানিটারি টাওয়েল দিলেন। এর বেশি কিছু আর বুঝিয়ে বলেননি। ভাবছিলাম, এই রক্তপাতের কারণে যদি মরে যাই; তাহলে কী হবে?’

ইনেস নামের আরেক তরুণীর বয়সও ১৮। পিরিয়ড নিয়ে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাকে চরম হ্যাপা সামাল দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পিরিয়ড শুরু হওয়ায় আমি দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গিয়েছিলাম। এটা ছেলে বন্ধুরা বুঝতে পেরে বলেছিল, বাতাসে লোহার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এটা শুনেই আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করেছিল।’

ছবিটি প্রতীকী।
ছবিটি প্রতীকী।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী ক্লেয়ার বলেন, মাসিক বিষয়ে তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তাঁরা তো মরে যাবে না, তাই না! বরং খোলামেলা আলোচনা করলে বিষয়টি নিয়ে অযথা তারা আর মাথা ঘামাবে না।’

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ২৪ শতাংশ মেয়ে পিরিয়ড নিয়ে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে নিঃসংকোচে কথা বলতে পেরেছেন বলে জানান।

জরিপে অংশ নেওয়া ছেলেদের মধ্যে একজন ১৯ বছরের তরুণ নিদার। তিনি বলেন, ‘পিরিয়ড নিয়ে জানতে চাওয়ার কিছু নেই। এটা কোনো দোষ নয়, প্রাকৃতিক ব্যাপার। তাই এটা নিয়ে কথা বলারও কিছু নেই। আমার জ্বর হলে তো আপনাকে বলতে যাব না যে আজ আমার জ্বর হয়েছে।’

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের নারী অধিকার প্রধান কেরি স্মিথ বলেন, ‘আমরা মনে করি, পিরিয়ড নিয়ে ছেলেমেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলে একসঙ্গে পড়ানো উচিত। ছেলেরা জানিয়েছে, মেয়েদের ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড নিয়ে ছেলেদের কিছু না জানাটা ঠিক নয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাজ্যের শিক্ষা বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, স্কুলগুলোতে ইতিমধ্যেই যৌনশিক্ষা কর্মসূচির আওতায় মাসিক নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছে। এটা জাতীয় বিজ্ঞান পাঠ্যসূচির মধ্যেও আছে।