রোহিঙ্গা বিতাড়নে ভারতের পরিকল্পনায় আদালতের স্থগিতাদেশ

রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের বিতাড়নের জন্য ভারত সরকার যে পরিকল্পনা করেছে, তা দেশটির সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছে। আজ শুক্রবার এক আদেশে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার আদেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আগামী ২১ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির আগ পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে।

আজ আদালত বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ক্ষেত্রে মানবিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এ বিষয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত। তাতে ভারত সরকারকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এ ক্ষেত্রে সরকারের একাধিক দায়িত্ব রয়েছে এবং জাতীয় স্বার্থ ও মানবিক সংকটের বিষয়টিতে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন।

ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, আদালত বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর গুরুত্ব অনেক এবং এতে রাষ্ট্রকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান মানবিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্রের নানাবিধ ভূমিকা রয়েছে। একদিকে যেমন জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থগুলো নিরাপদে রাখতে হবে, অন্যদিকে নিরীহ নারী ও শিশুদেরও অবহেলা করা যাবে না।’

এর আগে এক হলফনামায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলে অভিহিত করেছিল। সরকার আরও বলেছিল, রোহিঙ্গারা পাকিস্তানের আইএসআই ও জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের মতো সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এতে করে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল।

রোহিঙ্গা অভিবাসীদের করা এক আবেদনের জবাবে এই হলফনামা দাখিল করা হয়েছিল। ওই আবেদনে রোহিঙ্গা মুসলিমরা বলেছিলেন, প্রচণ্ড বৈষম্য, সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে তাঁরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন এবং ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ভারতের একদল বিশিষ্ট নাগরিক রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়িত না করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেন। এই বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর, সাবেক মন্ত্রী পি চিদাম্বরম, জি কে পিল্লাই প্রমুখ। তাঁরা বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের ব্যাপারে যে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা ধারণার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে ভারত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এমন ‘অদূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রহণ করতে পারে না।