জয় হয়েছে প্রথার, হারেনি পরিবেশও

সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দীপাবলির রাতে ভারতজুড়ে শব্দবাজি ও আতশবাজির দৌরাত্ম্য দেখা গেল ঠিকই, কিন্তু দূষণের মাত্রা গত বছরের তুলনায় হলো কম। পরম্পরা (প্রথা) বনাম পরিবেশের এই লড়াইয়ে নিরঙ্কুশ জয়-পরাজয় তাই কারও হলো না।
সুপ্রিম কোর্ট আগামী ১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ও সংলগ্ন অঞ্চলে শব্দ ও আতশবাজি নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে বাজি পোড়ানোয় কোনো কার্পণ্য ছিল না। কিন্তু আগেরবারের তুলনায় এবারের শব্দ-দৌরাত্ম্য কিছুটা কম। অন্যান্যবার দেখা যেত, দীপাবলির আগের দিন থেকেই বাজি পোড়ানো শুরু হতো, দীপাবলির দিন তা মাত্রা ছাড়িয়ে যেত। এবার দীপাবলির আগের দিন ছিল প্রায় শব্দহীন। এমনকি দীপাবলির সন্ধ্যা পর্যন্ত তেমন শব্দবাজি শোনা যায়নি। কিন্তু সন্ধ্যা সামান্য গাঢ় হওয়া মাত্র সব বাধা টপকে শব্দ ও আতশবাজি জেগে ওঠে। তবে মাঝরাতের পর তার প্রকোপ কমে যায়।
দেশের বিভিন্ন স্থানে দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শুক্রবার সকালে দেখা যায়, দূষণমাত্রা ‘খারাপ’ থেকে ‘খুব খারাপ’ পর্যায়ে পৌঁছালেও অন্যান্যবারের তুলনায় তা অধিকাংশ স্থানে ‘গুরুতর’ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। দেশটাও পরিণত হয়নি ‘গ্যাস চেম্বারে’।
কেন্দ্রীয় দূষণ বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী দীপাবলির দিন বৃহস্পতিবার রাজধানী দিল্লির ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ বা একিউআই ছিল ৩১৯। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাজি পোড়ানোর ফলে শুক্রবার সকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩৫৫। একিউআই ৪০০ পেরিয়ে গেলে তা ‘গুরুতর’ পর্যায়ে পড়ে। ৫০ পর্যন্ত তা ‘ভালো’, ১০০ পর্যন্ত ‘সন্তোষজনক’, ২০০ পর্যন্ত ‘মাঝারি’, ৩০০ হলে ‘খারাপ’, ৪০০ পর্যন্ত ‘খুব খারাপ’। গত বছর দীপাবলির পরের দিন সকালে দিল্লির একিউআইয়ের গড় মাত্রা ছিল ৪৫৫। বাজি বন্ধ না হলেও এবারের দূষণমাত্রা সেই তুলনায় অন্তত মন্দের ভালো বলা যায়।
এবার রাজধানী দিল্লির স্থানবিশেষে দূষণমাত্রায় যথেষ্ট হেরফের দেখা যায়। যেমন দক্ষিণ দিল্লির কিছু স্থানে দূষণমাত্রা ৯৭৮ পেরিয়ে যায়, অথচ পাঞ্জাবি বাগ কিংবা লোধি রোডে সেই মাত্রা ছিল যথাক্রমে ২৪৩ ও ৩৮৩। আনন্দ বিহারে অন্যবার দূষণের মাত্রা ‘গুরুতর’ পর্যায়ে পৌঁছালেও এবার তা ছিল ‘খুব খারাপ’ থেকে ‘গুরুতর’ পর্যায়ে।
এবার রাজধানীতে দূষণের মাত্রা আগেরবারের তুলনায় কম হওয়ার অন্য একটা বড় কারণ বাতাসের মান।