কাশ্মীরে হিজবুল মুজাহিদীন নেতার ছেলেকে গ্রেপ্তার

দমননীতি থেকে সরে এসে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদীন নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিনের ছেলে সৈয়দ শাহিদ ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হলো। গতকাল মঙ্গলবার শাহিদ ইউসুফকে দিল্লি ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)।
রাজ্য সরকারের কৃষি বিভাগের এই ৪২ বছর বয়সী কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১১ সাল থেকে তিনি হাওয়ালা মারফত উপত্যকার সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ জোগান দিয়ে আসছেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে এনআইএর পক্ষ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করার কথা স্বীকার করে বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে তাঁর যোগসাজশ স্পষ্ট হওয়ার পরেই শাহিদ ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, সৌদি আরবে ঘাঁটি গেড়ে থাকা হিজবুল সন্ত্রাসী নেতা আইজাজ আমেদ বাটের সঙ্গে শাহিদ ইউসুফের বহু কথাবার্তার রেকর্ড তাঁদের হাতে রয়েছে।
গত সোমবারেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে আলোচনার মাধ্যমে রাজ্যে শান্তি ও সুস্থিতি ফেরাতে সাবেক গোয়েন্দা কর্তা দীনেশ্বর শর্মাকে নিযুক্ত করেন। নরেন্দ্র মোদির সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে বারবার এই দাবি জানানো হলেও সরকার কখনো এভাবে দূত নিয়োগ করার দাবি মানেনি। বরং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের নেতৃত্বে দমনমূলক নীতির মাধ্যমে অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে। পিডিপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি প্রথমবারের মতো উপত্যকার শাসনভার হাতে নিয়েছে। কিন্তু তাতেও অবস্থার হেরফের ঘটেনি। শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা ব্যুরোর সাবেক প্রধান দীনেশ্বর শর্মার নিযুক্তি। অথচ ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শাহিদ ইউসুফের গ্রেপ্তারি নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। দূত নিযুক্তি কতটা আন্তরিক আর কতটাই বা মার্কিন বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে লোক দেখানো, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠে গেছে। এনআইএর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল দীনেশ্বর শর্মাকেও। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দুজনের কাজ আলাদা।’
জম্মু-কাশ্মীরের অশান্ত হয়ে ওঠা আজকের নয়। ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকেই উপত্যকায় অশান্তির শুরু। ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। বহুবার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং দিনে দিনে জটিলতর হয়ে উঠেছে। অটল বিহারি বাজপেয়ি হৃদয় দিয়ে হৃদয় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। বাসে চেপে লাহোর গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও উপত্যকার পরিস্থিতি বদলায়নি। বরং ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে কার্গিল যুদ্ধে লড়তে হয়েছিল কাশ্মীর পরিস্থিতির কারণে।
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর প্রচেষ্টা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এখন যিনি জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল, একটা সময় তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বাজপেয়ির আমলের শীর্ষ মন্ত্রী যশবন্ত সিনহাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দূত হিসেবে কাজ করার। মোদি সরকারের আমলেও তাঁরা উপত্যকায় গিয়েছেন। তাঁদের প্রতিবেদনে ধুলো জমেছে। কংগ্রেস আমলে ২০১০ সালে বিশিষ্ট সাংবাদিক দিলীপ পদগাঁওকর, তথ্য কমিশনার অধ্যাপক এম এম আনসারি ও দিল্লি পলিসি গ্রুপের অন্যতম ট্রাস্টি অধ্যাপিকা রাধা কুমারকে দূতের দায়িত্ব দিয়ে নিযুক্ত করেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। বহুবার উপত্যকা গিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা প্রতিবেদন পেশ করেছিলেন। সরকারের ঘরে সেই প্রতিবেদন এখনো জমা আছে। অবস্থার কিন্তু বিন্দুমাত্র হেরফের ঘটেনি। বরং অবনতি ঘটেছে।
দীনেশ্বর শর্মাকে বলা হয়েছে সবার সঙ্গে কথা বলতে। এই সবার মধ্যে অবশ্যই বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়াত কনফারেন্স নেতারা থাকছেন, যাঁদের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আজও ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সহজ করে তোলেনি। শুরু করেনি সর্বাঙ্গীণ আলোচনা। প্রশ্ন উঠছে, এবার তাহলে কি পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কথাবার্তা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার পথ প্রশস্ত হতে চলেছে?