যৌনবাহিত রোগ বাড়ছে অস্ট্রেলিয়ায়

অস্ট্রেলিয়ায় গনোরিয়া ও সিফিলিসসহ নানা ধরনের যৌনবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে গনোরিয়া রোগের প্রকোপ ৬৩ শতাংশ বেড়েছে বলে দেশটির জাতীয় যৌনস্বাস্থ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ সোমবার ‘অ্যানুয়াল সার্ভিল্যান্স রিপোর্ট অন এইচআইভি, ভাইরাল হেপাটাইটিস অ্যান্ড সেক্সুয়াল ট্রান্সমিশিবল ইনফেকশনস ইন অস্ট্রেলিয়া’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৬২ জন এই রোগে আক্রান্ত হতেন। এখন তা বেড়ে ১০১ জনে পৌঁছেছে; যা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটি অত্যন্ত হুমকির বিষয় বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যৌনবাহিত রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণেই মানুষকে আরও সচেতন করে তোলার ব্যাপারে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় যৌন স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালেই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এই এক বছরে ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষের গনোরিয়ায় আক্রান্ত। যাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই পুরুষ। গত বছর ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী পুরুষ ও ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের গনোরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি ছিল। তবে বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই হার বেড়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনটি সংকলনের কাজ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসে দ্য কিরবি ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি ইন সোসাইটির সার্ভিল্যান্স ইভালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চ প্রোগ্রামের প্রধান রেবেকা গাই। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে মানুষ এই যৌনবাহিত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে।’

রেবেকা গাই বলেন, যৌনবাহিত রোগ সম্পর্কে মানুষের সঠিক ধারণা নেই বলেই এমনটা হচ্ছে। এর জন্য যৌন আচরণ পরিবর্তন ও সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা করাতে হবে। জাতীয় যৌনস্বাস্থ্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন তরুণ, বয়স্ক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও গনোরিয়া সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন করে তুলতে হবে। কারণ, এই রোগের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ নারী ও ৫০ শতাংশ পুরুষের কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রেও যৌনবাহিত গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেড়ে গেছে। আর এই হার এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও বেশি।

দ্য লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ম্যাথিউ চিকো বলেন, ‘গনোরিয়া নিরাময়যোগ্য নয়। এই রোগের কারণে শরীরে দীর্ঘমেয়াদি অন্য সমস্যাও দেখা দেয়। যেমন পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (নারীর প্রজননতন্ত্র বা তলপেটের মারাত্মক ব্যথা), একটোপিক প্রেগনেন্সি বা গর্ভধারণে জটিলতা ও এমনকি কেউ বন্ধ্যত্বও হয়ে যেতে পারেন। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিসটেন্সের কারণে এই রোগটি প্রায় অনিরাময়যোগ্য।’

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় যৌনস্বাস্থ্য প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশটিতে গনোরিয়ার পাশাপাশি যৌনবাহিত রোগ ক্লামাইডিয়াতে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে যাচ্ছে। এই রোগের কারণে ২০১৬ সালে ৭১ হাজারের বেশি মানুষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে সিফিলিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এই হার ১০৭ শতাংশ বেড়ে গেছে।

রেবেকা গাই বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় এসব রোগে পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশটিতে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা একই আছে।

এর আগে বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শারীরিক সংসর্গের সময় ওরাল সেক্স (যৌনক্রিয়ার ক্ষেত্রে মৌখিক স্পর্শ বা মুখমেহন) করলে ভয়ংকর মাত্রায় গনোরিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় । আর সাম্প্রতিক সময়ে জন্মনিরোধক (কনডম) ব্যবহারে অনীহা বাড়ায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।