নগ্ন ছবি চাচ্ছে ফেসবুক!

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

শিরোনাম পড়েই হয়তো ভড়কে যেতে পারেন। যে ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় অনেকেই বেছে নিয়েছেন মৃত্যুর পথ; কারও বা জীবন ধ্বংসের মুখে—সে রকম ছবিই এবার চাচ্ছে খোদ ফেসবুক! হ্যাঁ, নগ্ন ছবিই চাচ্ছে ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ব্যবহারকারীর নিজের এ ধরনের নিরাপত্তার স্বার্থেই নগ্ন ছবি পাঠাতে বলা হচ্ছে।

আজ বুধবার ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অনেকেই ফেসবুকে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দেয়। একে বলা হয় ‘রিভেঞ্জ পর্নো’, যা সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে কারও জীবনে। এ ধরনের প্রতিশোধমূলক নগ্ন ছবি প্রকাশ ঠেকাতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেসবুক।

ফেসবুক বলছে, কোনো ব্যবহারকারী যদি আগেই তাঁদের কাছে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে দেন, তাহলে তারা নিশ্চিত করবে ওই ছবিটি আর কেউ কখনোই ফেসবুকে পোস্ট করতে পারবেন না। ওই ছবিটি তারা ব্লক করে দেবে।

কিন্তু বিশ্বাস! ফেসবুককে কি বিশ্বাস করা যায়? সেটা আপনার নিজের বিষয়। তবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ফেসবুক ওই সব ছবি স্টোর করে রাখবে না। এর বদলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে হুবহু ছবি মেলানোর প্রযুক্তি তৈরি করা হবে। এই প্রযুক্তির কারণেই ভবিষ্যতে ওই ছবিটির আর কেউ পোস্ট করতে পারবেন না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রিভেঞ্জ পর্নো প্রতিরোধে আগামী এপ্রিলেই ফেসবুক অস্ট্রেলিয়ায় এই পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে। দেশটির ই-সেফটি কমিশনার ও অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সরকারের একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ফেসবুক এ কাজটি করবে। পরে ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাতেও তা চালু করা হবে।

এ বিষয়ে ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লেসলে কারহার্ট বলেন, ‘এতে বিপর্যয়ও ঘটে যেতে পারে। কারণ, একটি ডিজিটাল ছবি পুরোদমে মুছে ফেলা খুব একটা সহজ কাজ নয়। সত্যি যে তারা ছবিটি স্টোর করবে না। কিন্তু সেটা তো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্থানান্তর হচ্ছে; যা ফরেনসিক মেমোরিতে থেকে যাচ্ছে।’

অস্ট্রেলিয়ার ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির ই-সেফটি কমিশনার ইনম্যান গ্র্যান্ট বলেন, ই-মেইলের মাধ্যমেই নিজের ওই সব ছবি পাঠাতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তারা (ফেসবুক) এই ছবি স্টোর করবে না। শুধু লিংকটাই তারা স্টোর করে রাখবে; যা পরবর্তী সময়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ফটো-ম্যাচিং টেকনোলজির মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে।

নিউইয়র্কভিত্তিক সেক্সুয়াল প্রাইভেসি নিয়ে কাজ করা আইনজীবী ক্যারি গোল্ডবার্গ বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। কারণ, এতে রিভেঞ্জ পর্নো বন্ধ হতে সহায়তা করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রেও রিভেঞ্জ পর্নো ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালে ডেটা অ্যান্ড সোসাইটির জরিপে দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৪ শতাংশই এর শিকার। এর মধ্যে ৩০ বছরের নিচের নারীদের ১০ শতাংশই অনলাইনে এ ধরনের হুমকির শিকার হয়েছেন। পরে অনুমতি ছাড়াই তাঁদের ব্যক্তিগত ছবি অনলাইনে প্রকাশ পায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরের শুরুর দিকে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে ‘মেরিনস ইউনাইটেড’ নামে একটি প্রাইভেট গ্রুপ বন্ধ করে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ওই গ্রুপটির সদস্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সদস্যসহ ৩০ হাজার। গ্রুপটিতে নৌবাহিনীর নারী সহকর্মীদের নগ্ন ছবি প্রকাশ করায় ফেসবুক তা বন্ধ করে দেয়।

ইনম্যান গ্র্যান্ট বলেন, ‘আমরা দেখেছি, অনেক আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও তোলা হয়েছে দুজনের সম্মতিতেই। কিন্তু তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয় আরেকজনের সম্মতি ছাড়াই।’