বনে চলছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

গত রোববার বন কোলন শহরের পাশে হামবাক কয়লা খনিতে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
গত রোববার বন কোলন শহরের পাশে হামবাক কয়লা খনিতে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

সারা বিশ্বের পরিবেশবাদী, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারি কর্মকর্তা, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যমকর্মীসহ ১৯৭ দেশের প্রায় ২৩ হাজার মানুষের পদচারণায় এখন সরগরম জার্মানির বন শহর। এবারের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি ২০১৫ সালে প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে অঙ্গীকারবদ্ধ নয়টি বিষয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে দুই সপ্তাহ জুড়ে আলোচনা করছেন।

এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ দেশ ফিজিতে হওয়ার কথা থাকলেও বিশাল আয়োজনে অসমর্থ হওয়ায় জার্মান সরকার এ আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছেন। মূলত প্যারিসের অঙ্গীকারনামায় চুক্তিবদ্ধ দেশগুলো পরিবেশের ক্ষতিকারক বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে কতটুকু লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছেছেন, তাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের উপায়গুলো কীভাবে সম্পূর্ণ করছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলো যারা মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী তারা আবহাওয়া ও জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সুরক্ষাতে সহযোগিতা করতে পারে—এ সংক্রান্ত নয়টি বিষয় নিয়েই এবারের সম্মেলনে আলোচনা হচ্ছে।
২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে ১৯৬ দেশ এ শতাব্দীতে বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রি থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানোর লক্ষ্যে স্থির করেছিল।

এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা (কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস) কপ ২৩ উদ্বোধন করেন এবারের সম্মেলনের সভাপতি ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারমা ও জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী বারবারা হেন্ডরিকেস। ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সম্মেলন চলাকালীন বনে আসছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এ্যমুনিয়েল ম্যাক্রন, মার্কিন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শান্তিতে নোবেল জয়ী আল গোর, অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট দলীয় গভর্নর জেরি ব্রাউন প্রমুখ।

গত রোববার বন কোলন শহরের পাশে হামবাক কয়লা খনিতে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
গত রোববার বন কোলন শহরের পাশে হামবাক কয়লা খনিতে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকেও পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদ, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

সম্মেলনে মূল আলোচনার বাইরে বৈশ্বিক পরিবেশ জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশের দূষণের কারণে যেসব ক্ষতি হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যা হতে পারে, সেসব বিষয় নিয়েও স্থানীয় পরিবেশবাদী, রাজনৈতিক আন্দোলনকারী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অসংখ্য সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৭ নভেম্বর বনের গুস্তাফ স্ট্রেসম্যান ইনস্টিটিউটে কয়লা জ্বালানি থেকে উত্তরণ বিষয়ক ‘দ্যা কোল অ্যান্ড গেম’ শীর্ষক একটি সেমিনারে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, জার্মানির পরিবেশবাদী সবুজ দলের এমপি বার্বেল হোর্ণ, ভারতীয় পরিবেশবাদী সৌম্য দত্তসহ ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া ও কেনিয়ার পরিবেশবাদীরা।

বনের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জার্মানি ও বাংলাদেশের পরিবেশবাদীদের উদ্যোগে, আগামী ১০ নভেম্বর রাজধানী বার্লিন বাংলাদেশে পরমাণু জ্বালানির ব্যবহারের ঝুঁকি শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেমিনারে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদসহ ভারতীয় ও জার্মানির পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন। জলবায়ু সম্মেলনকে ঘিরে আগামী ১১ নভেম্বর পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বন শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।