তারুণ্যে ভরা ভারতে বর্ষীয়ান নেতাদের দাপট

বীরভদ্র সিং (ওপরে বাম  থেকে ), প্রকাশ সিং বাদল,এম করুণানিধি , মুলায়ম সিং যাদব ও সোনিয়া গান্ধী।
বীরভদ্র সিং (ওপরে বাম থেকে ), প্রকাশ সিং বাদল,এম করুণানিধি , মুলায়ম সিং যাদব ও সোনিয়া গান্ধী।

ভারতের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। বিশ্বের অন্যমত তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ ভারত। তবে তরুণ এই সমাজে এখনো জনপ্রিয় বর্ষীয়ান নেতারা। যে বয়সে এখন তাঁদের আয়েশি অবসর জীবন যাপনের কথা, সেই বয়সেই কিনা তাঁরা রয়েছেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে।

এ বিষয়ে দৈনিক দ্য হিন্দুর রাজনৈতিক সম্পাদক নিস্তুলা হেব্বার বলেন, বর্ষীয়ান নেতারা একটি প্রকৃতিগত সুবিধা পান। কারণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরির বিষয়টি রাজনৈতিক ভিত তৈরি করতে এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বীরভদ্র সিং 
বর্ষীয়ান এই নেতার বয়স ৮৩ বছর। এখনো রাজনীতির মাঠে পুরোদস্তুর সক্রিয় তিনি। টানা সপ্তমবারের মত হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার আশা করছেন। বীরভদ্র সিং এমন এক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, ব্রিটিশ শাসনের আগে যে পরিবার হিমাচল প্রদেশের একটি অংশ শাসন করত। তিনি স্বীকার করেন যে পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য তাঁর কর্মজীবনে সাহায্য করেছে। এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাতে তিনি বলেন, জনগণ আমাকে সম্মান করে। তারা আমার পরিবার এবং বংশের সম্মান করে।

প্রকাশ সিং বাদল
চলতি বছরের শুরুতে ২ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার পাঞ্জাবে পঞ্চমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন ৮৯ বছর বয়সের নেতা প্রকাশ সিং বাদল। পরে মার্চে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। দায়িত্ব পান কংগ্রেসপন্থী নেতা অমরিন্দর সিং, যার বয়স ৭৫ বছর। তার পরিবারেরও রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে।

এম করুণানিধি
তামিল নাড়ু রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধি। ৯৪ বছরের এই নেতা পাঁচবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর দল দ্রাবিড় মুনাত্রা কাজাঘামের (ডিএমকে) প্রধান তিনি। এখনো রাজনীতির মঞ্চে কাজ করে যাচ্ছেন। বলা হয়, তাঁর পরে দলের দায়িত্ব নেবেন তাঁর ছেলে এম কে স্টালিন। যার বয়স ৬৪ বছর।

মুলায়ম সিং যাদব
উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের বয়স ৪৪ বছর। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাবাকে হটিয়ে সমাজবাদী পার্টির প্রধানের দায়িত্ব নেন অখিলেশ যাদব। তাঁর বাবা মুলায়েম সিং যাদবের বয়স ৭৭।

সোনিয়া গান্ধী
ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। দলটির নেতৃত্বে নেহরু-গান্ধী পরিবারের সদস্যরা। স্বাধীনতার পর থেকেই কখনো ক্ষমতায়, কখনোবা বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকেছে কংগ্রেস। তবে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পরাজয় এবং এরপর বিধানসভা নির্বাচনে একের পর এক ভরাডুবির কারণে কংগ্রেস নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি সোনিয়া গান্ধী তাঁর বয়স ৭৭ বছর। তাঁর পরে সভাপতির পদে যিনি দাবিদার তিনি হলেন তাঁর ছেলে কংগ্রেসের বর্তমান সহসভাপতি রাহুল গান্ধী। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে হারের পর তরুণ নেতাদের এগিয়ে আসার বিষয়ে জোর দেন বাহুল গান্ধী। কিন্তু এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধের মুখোমুখি হন।

সাংবাদিক কাঞ্চন গুপ্ত বলেন, দুঃখজনক যে আমরা একটি সুন্দর অবসর বেছে নিই না। ভালো একটি ইনিংস খেলার খেলে বিদায় নেওয়ার কথা ভাবি না। সেই সঙ্গে এটাও যুক্ত করতে হয় সে আমাদের রাজনীতি পৃষ্ঠপোষকতা নির্ভর। আমি একজনকে কেন ভোট দেব, তাঁর কাছ থেকে কী পেতে পারি—আমরা এ নিয়ে ভাবি।