পরাশক্তিগুলোর 'খেলার মাঠ' উত্তর কোরিয়া!

কোরীয় যুদ্ধের একটি মুহূর্ত। ছবি: এএফপি
কোরীয় যুদ্ধের একটি মুহূর্ত। ছবি: এএফপি

বর্তমান বিশ্বে উত্তর কোরিয়া এখন এক সংকটের নাম। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান আছে পরমাণু বোমার আতঙ্কে। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উত্তর কোরিয়া হলো বিশ্বরাজনীতিতে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের দাবার ঘুঁটি। সংকটের সমাধান যে পরাশক্তি করতে পারবে—এশিয়া ও বিশ্বের রাজনীতিতে একাধিপত্য বিস্তারের সুযোগও পাবে সে।

তবে এই ক্ষমতার লড়াই কিন্তু আজ থেকে শুরু হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৃষ্টি হয় কোরিয়া। এর বছর খানেক পর তা ভাগ হয়ে যায়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে আবির্ভূত হয় উত্তর কোরিয়া। আর যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় জন্ম হয় দক্ষিণ কোরিয়ার। ১৯৫০-এর দশকে দুই কোরিয়ার যুদ্ধ হয়। এরপর থেকে বিশ্বের দুই পরাশক্তির স্নায়ুযুদ্ধকালীন উত্তেজনার রেশ পড়ে দুই কোরিয়ার সম্পর্কে।

চীনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। দুই কোরিয়ার যুদ্ধের সময় একমাত্র চীনের সমর্থনের কারণেই গো-হারা হারতে হয়নি উত্তর কোরিয়াকে। সামরিক দিক থেকে চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার মৈত্রী সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বের মধ্যে একমাত্র এই দেশটিকে রক্ষার ব্যাপারেই চুক্তিবদ্ধ চীন। এ দেশটির কারণেই এখনো টিকে আছে কিম জং-উনের দেশের অর্থনীতি এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বিনিয়োগ করতে পারছে। জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার ওপর অত্যন্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চাইলেও চীনের আপত্তির কারণে তা করা যায়নি। ফলে দেশটির কয়লা ও তেল সরবরাহে বড়সড় কোনো বাধা আসেনি, চালু থেকেছে অর্থনীতির চাকা।

উত্তর কোরিয়ার পতাকা
উত্তর কোরিয়ার পতাকা
এক নজরে উত্তর কোরিয়া
রাজধানী: পিয়ংইয়ং
জনসংখ্যা: প্রায় আড়াই কোটি (জাতিসংঘের দেওয়া ২০১২ সালের হিসাব)
ভাষা: কোরিয়ান
গড় আয়ু: পুরুষদের ৬৬ বছর; নারীদের ৭২ বছর (জাতিসংঘের দেওয়া হিসাব)
মুদ্রা: ওন
সূত্র: বিবিসি


উত্তর কোরিয়ার জন্মই হয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমর্থনে। প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সাং একসময় সোভিয়েত রেড আর্মির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কোরীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হওয়ার পর সোভিয়েত ব্লকের সহযোগিতায় ১৯৪৮ সালে উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন তিনি। স্নায়ুযুদ্ধের সময় দেশটির ওপর সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভাব ধরে রাখতে পারলেও জার্মানির বার্লিন দেয়াল পতনের পর তা কমে আসে। সোভিয়েত ব্লক ভেঙে যাওয়ায় রাশিয়ার পক্ষে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই জায়গাটিই নিয়ে নেয় চীন। এখন আবার কোরীয় সংকটে নাক গলিয়ে আগের অবস্থা ফিরে পেতে চাইছে পুতিনের রাশিয়া।

উত্তর কোরিয়া নিয়ে এ দুই দেশের মাথাব্যথার কারণটি পুরোপুরি ভূরাজনৈতিক। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত আছে চীন ও রাশিয়ার। তাই এশিয়ার ওই অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনা প্রয়োজন। রাশিয়া ও চীন—উভয়ই কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি-সংক্রান্ত নীতিকে সমর্থন করে না। পিয়ংইয়ংয়ের নীতির পরিবর্তন চায় এই দুই পরাশক্তি। এ জন্য সীমিতভাবে অর্থনৈতিক সহায়তা কর্মসূচিও চালু করার পক্ষে তারা। তবে তা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এশিয়ার রাজনীতিতে জায়গা ছেড়ে দিতে নারাজ চীন ও রাশিয়া।