অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বিচ্ছেদের পথে যুক্তরাজ্য

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট নামে পরিচিত) কার্যকর করা নিয়ে চলমান সমঝোতায় আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। আদৌ কোনো সমঝোতা হবে কি না, তা নিয়েও আছে চরম অনিশ্চয়তা। তবে ইইউর সদস্যপদ পুরোপুরি ত্যাগ করে পূর্ণাঙ্গ বিচ্ছেদের পথেই এগোচ্ছে যুক্তরাজ্য।

২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ব্রেক্সিট কার্যকর হবে বলে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করেছে থেরেসা মের সরকার। আবার ব্রেক্সিটের চূড়ান্ত চুক্তির ওপর পার্লামেন্টে বাধ্যতামূলক ভোটাভুটি হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যাতে এমপিরা ওই চুক্তি গ্রহণ বা বর্জন করতে পারেন। তবে এমপিরা চুক্তি বর্জন করলেও ব্রেক্সিট কার্যকর থেমে থাকবে না। সে ক্ষেত্রে কোনো সমঝোতা ছাড়াই ব্রেক্সিট বাস্তবায়িত হবে।

বিচ্ছেদ কার্যকর করার প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের সংসদে ব্রেক্সিট বিল (আনুষ্ঠানিক নাম ইইউ উইথড্রয়াল বিল) পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর কোনো বিষয়ে আইনের যাতে তাৎক্ষণিক ঘাটতি না তৈরি হয়, সে জন্য ইইউর সব আইনকে যুক্তরাজ্যের আইনের অধিভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে এ বিলে। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই শেষে যেসব আইন কাজে আসবে না, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে অথবা প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। বাদ দেওয়া এবং সংশোধনীর কাজটি যাতে পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়াই মন্ত্রিপরিষদ করতে পারে, সে জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট বিলে।

মন্ত্রিপরিষদকে এমন ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে শুরু থেকেই তীব্র আপত্তি এমপিদের। তারা মনে করে, এতে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে এবং জনগণের স্বার্থ ঝুঁকিতে পড়বে। তুমুল আপত্তি সত্ত্বেও প্রথম দফা ভোটাভুটিতে আইনটি পাস হয়েছে। ডিসেম্বরে চূড়ান্ত ভোটাভুটির আগে আজ মঙ্গলবার থেকে ওই বিলের ওপর সংসদে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দলের সংসদ সদস্যরা বিলটিতে মোট ৪৭০টি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন।

নিজ দলের ডজন খানেক এমপির বিরোধিতার মুখে আইন পাস করা সন্দিহান সরকার গতকাল সোমবার ঘোষণা দিয়েছে, ইইউর সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির ওপর ভোটাভুটির সুযোগ পাবেন এমপিরা। এর আগে গত শুক্রবার এই বিলে সরকার ব্রেক্সিট কার্যকরের দিনক্ষণ যুক্ত করার প্রস্তাব করে। এ প্রস্তাব পাস হলে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ব্রেক্সিট কার্যকরের বিষয়টি আইনে পরিণত হবে। ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষের এমপিদের এক করে বড় কোনো বিরোধিতা ছাড়াই বিলটি পাস করিয়ে নেওয়াই সরকারের উদ্দেশ্য।

ব্রেক্সিট সমঝোতা নিয়ে ষষ্ঠ দফা আলোচনা শেষে গত শুক্রবার ইইউর প্রতিনিধি মিশেল বার্নিয়ে বলেন, সম্পর্ক চুকিয়ে নিতে আলোচনার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। ফলে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা অনিশ্চিত। সম্পর্ক চুকিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত জানাতে যুক্তরাজ্যকে দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছে ইইউ।

তবে, ব্রেক্সিট বিল পাস নিয়ে মে সরকারের তোড়জোড়ে মনে হচ্ছে প্রয়োজনে সমঝোতা ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করবে যুক্তরাজ্য।