কিছু প্রশ্নের সমাধান হয়নি

দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির পরিচিত মুখ জিম্বাবুয়ের সদ্য পদত্যাগ করা প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ ছিল। কিন্তু তাঁকে হটানো যাচ্ছিল না। হুট করেই ঘটল তাঁর পতন। পুরো প্রক্রিয়া ছিল রক্তপাতহীন।

এক সপ্তাহ আগে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছিল সেনাবাহিনী। সপ্তাহ ঘুরতেই দৃশ্যপট ভিন্ন। নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নিতে যাচ্ছেন। দেশের পরিস্থিতি শান্ত। কিন্তু এমন কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর এখনো জনসমক্ষে আসেনি।

সেনাপ্রধানকে রক্ষার্থে অভ্যুত্থান?
প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা ছিল মুগাবের। এ লক্ষ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে এই মাসের শুরুর দিকে বরখাস্ত করেন। এর ফলে সৃষ্ট সংকটের কারণে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী।

মূলত ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফে পরিবর্তন আনার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি সেনাবাহিনী। এ নিয়ে মুগাবেকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান কনস্টাতিনো চিয়েংগা। তাঁর মনে হয়েছিল, স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর নানগাগওয়ার প্রতি অবিচার করা হয়েছে।

এরপর চীন সফরে যান জিম্বাবুয়ের সেনাপ্রধান। মুগাবে সেনাপ্রধানের ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং দেশে ফেরার পর তাঁকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি চিয়েংগার কানে পৌঁছায়। তাই দেশে ফিরে তিনি বিমানবন্দরে অনুগত সেনাদের দিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। এরপরই মুগাবেকে গৃহবন্দী করা হয়। মূলত সেনাপ্রধানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় সামনে চলে আসায় মুগাবেকে হটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

মুগাবে কোথায়?
১৪ নভেম্বর মুগাবেকে গৃহবন্দী করে সেনাবাহিনী। সর্বশেষ মঙ্গলবার তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা আসে। এর আগে তাঁকে একবারই দেখা গিয়েছিল, গত রোববার জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণ দেওয়ার সময়। জানা যায়, ১৭ নভেম্বর তিনি সেনা প্রহরায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। তবে পদত্যাগের পর এখন তিনি কোথায় আছেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।

ভাষণের সময় আসলে কী হয়েছিল?
রোববার টেলিভিশনে মুগাবের ২০ মিনিটের ভাষণ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। সেনা কর্মকর্তা পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। এর আগে নিজ দল তাঁকে পরিত্যাগ করেছিল। দেশের নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী। ধারণা করা হচ্ছিল, ওই ভাষণে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দেন মুগাবে।

অনেকে দাবি করেন, আগে থেকে প্রস্তুত করা ভাষণই পড়ছিলেন মুগাবে। কিন্তু ভাষণের কিছু অংশ চেয়ারের নিচে ফেলে দেওয়া হয়। আবার অনেকে ধারণা করছেন, মুগাবে হয়তোবা সেনা পরিবেষ্টিত অবস্থায় টেলিভিশন ভাষণে পদত্যাগ করতে চাননি।

মুগাবে এখন কী করবেন?
পদত্যাগের চুক্তি অনুযায়ী মুগাবে দায়মুক্তি পাচ্ছেন। তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। তিনি কি দেশে থাকবেন, নাকি বিদেশে যাবেন? তাঁর বিদেশ যাত্রায় আপত্তি নেই সেনা কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের। ৯৩ বছর বয়স্ক মুগাবে দীর্ঘ সময় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফলে তিনি সেখানে গিয়ে থাকতে পারেন।

আবার প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সঙ্গে মুগাবের সুসম্পর্ক রয়েছে। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকাও সম্ভাব্য গন্তব্যস্থল হতে পারে। কিন্তু মুগাবেকে আশ্রয় দিলে দক্ষিণ আফ্রিকার ভোটাররা কীভাবে নেবেন, তাও ভাবতে হবে জ্যাকব জুমার। আর মডেলকে মারধর করার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্রেস মুগাবের নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছে।