মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক চায় চীন

মিয়ানমারের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতি ও নিরাপত্তার স্বার্থে চীন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরও সম্পর্কোন্নয়ন চায়। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং বর্তমানে চীন সফর করছেন। গত বুধবার বেইজিংয়ে এক বৈঠকে তাঁকে এ আহ্বান জানায় চীনের সামরিক কর্তৃপক্ষ।
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহু বছর ধরে বেশ দৃঢ়। কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস ও তেল খাতে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়ছে। আর কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়লেও চীন বরাবরই মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করে আসছে।
নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ এটিকে ‘জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য উদাহরণ’ বলছে। যুক্তরাষ্ট্র গত বুধবার এটিকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে।

চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক বেশ পুরোনো। সামরিক জান্তা বহু বছর ধরে মিয়ানমার শাসন করেছে। তখন পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ছিল মিয়ানমারের ওপর। এই সুযোগে সামরিক জান্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে চীন। সম্প্রতি মিয়ানমারের জ্বালানি খাতে চীনের উপস্থিতি বেড়েছে। চীন বঙ্গোপসাগর থেকে গ্যাস উত্তোলনে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করছে।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার বেইজিংয়ে চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের জয়েন্ট স্টাফ ডিপার্টমেন্টের প্রধান জেনারেল লি জুচেংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মিন অং হ্লাইয়াং। এতে চীনের সেনা কর্মকর্তা বলেন, চীনে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি প্রতিবেশী মিয়ানমারের উন্নয়নের জন্য দারুণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। লি বলেন, জটিল এবং পরিবর্তনীয় আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রাখতে আগ্রহী চীন।

চীন-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বেশ কয়েক বছর ধরে লড়াই করে যাচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সেখানে লড়াইয়ের কারণে সীমান্তের বহু গ্রামবাসীকে চীনে গিয়ে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এ ঘটনায় চীন বেশ ক্ষুব্ধ।

বৈঠকে লি বলেন, সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির বিনিময় হলে দুই দেশই উপকৃত হবে। অভিন্ন সীমান্ত আরও শান্ত ও স্থিতিশীল থাকবে।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের ভূমিকার প্রশংসা করে এর জন্য ধন্যবাদ জানান মিয়ানমারের সেনাপ্রধান।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারে কোনো ধরনের সমরাস্ত্র বিক্রিতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এর পাশাপাশি দায়ী সেনা কর্মকর্তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি জানানো হয়েছে।