৫৪ বছর পর জেগে উঠেছে আগ্নেয়গিরি

বালি দ্বীপের মুনতিগ গ্রামের মানুষ প্রার্থনায় বসেছেন। মাউন্ট আগুং আগ্নেয়গিরি থেকে যেন অগ্ন্যুৎপাত না হয়, তার জন্যই এই প্রার্থনা। বালি, ইন্দোনেশিয়া, ২৬ নভেম্বর। ছবি: এএফপি
বালি দ্বীপের মুনতিগ গ্রামের মানুষ প্রার্থনায় বসেছেন। মাউন্ট আগুং আগ্নেয়গিরি থেকে যেন অগ্ন্যুৎপাত না হয়, তার জন্যই এই প্রার্থনা। বালি, ইন্দোনেশিয়া, ২৬ নভেম্বর। ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে ৫৪ বছর পর জেগে উঠেছে মাউন্ট আগুং নামের একটি আগ্নেয়গিরি। সেটি থেকে ক্রমাগত গরম ধোঁয়া ও ছাই উদ্‌গিরণ হচ্ছে। আগ্নেয়গিরি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলের হাজার হাজার মিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বালি থেকে উড়োজাহাজের মোট ২৮টি ফ্লাইট হয় বাতিল, না হয় পেছানো হয়েছে। এর ফলে দ্বীপটিতে আটকে পড়েছেন হাজারো পর্যটক।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, রোববার সকালে আগ্নেয়গিরি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া ও ছাই মাটি থেকে ৪ হাজার মিটার উচ্চতায় ছড়িয়ে পড়ে। বালি দ্বীপের বিমানবন্দরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সকালের ধোঁয়ার কারণে কমপক্ষে ২৮টি ফ্লাইট বাতিল বা পেছাতে হয়েছে। ফ্লাইট বাতিলের কারণে প্রায় দুই হাজার যাত্রী দ্বীপে আটকে পড়েছেন। এঁদের বেশির ভাগই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।

ইন্দোনেশিয়ার ভলকানোলজি সেন্টার সাম্প্রতিক এ ঘটনায় সম্ভাব্য অগ্ন্যুৎপাতের আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। বলা হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলে উদ্বেগজনক মাত্রায় ছাই ছড়িয়ে পড়েছে।

মাউন্ট আগুং আগ্নেয়গিরি থেকে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে ধোঁয়া ও ছাই। বালির কুবু এলাকায় তাই দেখছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: এএফপি
মাউন্ট আগুং আগ্নেয়গিরি থেকে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে ধোঁয়া ও ছাই। বালির কুবু এলাকায় তাই দেখছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: এএফপি

গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই মাউন্ট আগুং নামের এই সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল। ওই সময় থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্কতার সর্বোচ্চ মাত্রা জারি করেছিল। তখন প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আগ্নেয়গিরির আশপাশের এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়।

আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়া ও ছাইয়ের উদ্‌গিরণ দেখা যাচ্ছে কয়েক মাইল দূর থেকেও। স্থানীয় এক শিশু সেই দৃশ্যই মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দী করছে। ছবি: এএফপি
আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়া ও ছাইয়ের উদ্‌গিরণ দেখা যাচ্ছে কয়েক মাইল দূর থেকেও। স্থানীয় এক শিশু সেই দৃশ্যই মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দী করছে। ছবি: এএফপি

তবে গত মাসের শেষ দিকে এ আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা কিছুটা কমে গিয়েছিল। ওই সময় অনেক মানুষ আবার তাঁদের বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। সতর্কতার মাত্রাও তখন কমিয়ে দেওয়া হয়।

আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার কারণে স্থানীয় জেলেরা বন্ধ করে দিয়েছেন মাছ ধরা। অনেকেই নৌকা বেঁধে রাখছেন সমুদ্র সৈকতে। ছবি: রয়টার্স
আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার কারণে স্থানীয় জেলেরা বন্ধ করে দিয়েছেন মাছ ধরা। অনেকেই নৌকা বেঁধে রাখছেন সমুদ্র সৈকতে। ছবি: রয়টার্স

গত মঙ্গলবার আগ্নেয়গিরি থেকে আবার উদ্বেগজনক মাত্রায় ধোঁয়া ও ছাই উদ্‌গিরণ শুরু হয়। এ সময় ২৫ হাজার লোককে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়। আগ্নেয়গিরির সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকালও মাউন্ট আগুং থেকে ধোঁয়া ও ছাই উদ্‌গিরণ হয়েছে।

মাউন্ট আগুং আগ্নেয়গিরি ফের জেগে উঠেছে। এই আগ্নেয়গিরিতে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। বালি, ইন্দোনেশিয়া, ২৬ নভেম্বর। ছবি: রয়টার্স
মাউন্ট আগুং আগ্নেয়গিরি ফের জেগে উঠেছে। এই আগ্নেয়গিরিতে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। বালি, ইন্দোনেশিয়া, ২৬ নভেম্বর। ছবি: রয়টার্স

ইন্দোনেশিয়ায় বর্তমানে ১২০টিরও বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এগুলোর একটি হলো মাউন্ট আগুং। ১৯৬৩ সালে সর্বশেষ এতে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। ওই সময় প্রায় ১ হাজার ৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়।