শত্রুর কারণে তারা মিত্র

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গত অক্টোবরে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওই আলোচনায় অন্যতম প্যানেল আলোচক ছিলেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক পরিচালক ইফ্রায়িম হ্যালেভি এবং প্রিন্স তুর্কি বিন ফয়সাল আল-সৌদ, যিনি সৌদি আরব গোয়েন্দা সংস্থার নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৪ বছর ধরে। অনুষ্ঠানে তাঁদের আসন ছিল পাশাপাশি।

কয়েক বছর আগে এমন দৃশ্য কল্পনাও করা যেত না। এখনো সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মাঝে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত দুই দেশের সম্ভাব্য গোপন সম্পর্ক নিয়েও প্রকাশ্যে আলোচনা হয়নি। তবে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে এবং তা ঘটছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের অভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা শত্রু ইরানের কারণে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার নিয়ে সৌদি আরব ও ইসরায়েল দুই দেশই উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী ইউভাল স্টাইনিতজ সম্প্রতি নিজ দেশের আর্মি রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে গোপন যোগাযোগ আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন আরব ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সঙ্গে আমাদের গোপন যোগাযোগ আছে। যোগাযোগের বিষয়টি গোপন রাখা হয় অন্য পক্ষের স্বার্থের কারণে। আমরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্য পক্ষের ইচ্ছাকে সম্মান করি, তা সৌদি আরব হোক কিংবা অন্য কোনো আরব ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হোক।’

প্রিন্স তুর্কি বিন ফয়সাল গত জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকের ফাঁকে ইসরায়েলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিজিপি লিভিনির সঙ্গে বৈঠক করেন। গত বছর সৌদি আরবের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আনোয়ার এসকি ইসরায়েল সফরে যান। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ইজেনকত প্রথমবারের মতো সৌদি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি ইরান ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের রফিক হারিরি সেন্টার ফর দ্য মিডল ইস্টের ফেলো এইচ এ হ্যালিয়ার বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলা রিয়াদের জন্য রাজনৈতিকভাবে বিব্রতকর হবে। কেননা, তারা এখনো ফিলিস্তিন সমস্যার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। কিন্তু এটা সত্য যে ইরান ইস্যুতে সৌদি আরবকে বেশ ক্ষুব্ধ করছে।

হ্যালিয়ার বলেন, সৌদি আরব যদি ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করে তবে তাদের কিছু লাভ হবে। তখন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক এবং সাইবার শক্তির সরাসরি সহায়তা পাবে সৌদি আরব। কিন্তু এতে করে অস্বস্তিতে পড়বে তারা। কারণ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিরসনে ২০০২ সালে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছিল সৌদি আরব। তা এখনো মেনে নেয়নি ইসরায়েল।