সেনাদের ভূমিকা নিয়ে বিচার বিভাগে বিভক্তি

ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের ধর্মঘট চলাকালে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: এএফপি
ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের ধর্মঘট চলাকালে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে কট্টরপন্থীদের অবরোধের ফলে সৃষ্ট সংকট নিরসনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আদালতের মধ্যে বিভক্তি শুরু হয়েছে। অচলাবস্থা নিরসনে সেনাবাহিনী সমঝোতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় সোমবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকি।

কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার লাহোর হাইকোর্টের এক বিচারপতি সেনা ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বিচারপতি কাজী মুহাম্মদ আমিন আহমেদের ভাষ্য, পাকিস্তানকে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছে সেনাবাহিনী।

সম্প্রতি নির্বাচনী আইন সংশোধনের সময় জনপ্রতিনিধিদের শপথের একটি অংশে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উল্লেখ বাদ পড়ার পর ধর্মীয় অবমাননার (ব্লাসফেমি) অভিযোগে আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের অপসারণ চেয়ে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে রাজধানী ইসলামাবাদে প্রবেশের প্রধান সড়ক ফাইজাবাদ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে কয়েকটি ধর্মীয় দলের সমর্থকেরা। গত শনি ও রোববার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। মারা যান কমপক্ষে ছয়জন। আহত হন দুই শতাধিক।

এরপর সরকার ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সমঝোতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া রোববার প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসির সঙ্গে বৈঠক করেন। সোমবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদ। অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় তেহরিক-ই-লাব্বাইকসহ অন্য কট্টরপন্থী দলগুলো। সমঝোতাসংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল, স্বরাষ্ট্রসচিব আরশাদ মির্জা, তেহরিক-ই-লাব্বাইকের নেতা খাদিম হোসাইন রিজভি এবং মেজর জেনারেল ফাইজ হামিদ। এই সেনা কর্মকর্তা সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত আজিজ সরকার এবং সেনাবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সেনাপ্রধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহীর আদেশ মানার পরিবর্তে ‘সমঝোতাকারীর’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিচারপতি জানতে চান, ‘সমঝোতাকারীর ভূমিকা নেওয়ার সেনাবাহিনী কে? আইনের কোথায় একজন মেজর জেনারেলকে এই এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে?’

বিচারপতি শওকত আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই বক্তব্যের কারণে তাঁর জীবননাশ কিংবা গুম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

তবে গতকাল ‘নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয়ে’ তুলে নেওয়া এক ব্যক্তির বিষয়ে শুনানিতে লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ আমিন বলেন, সবাই জানে, সেনাবাহিনী পাকিস্তানকে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছে। যদি সেনাবাহিনী ভূমিকা না রাখত তাহলে বহু লোকের প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।