বিজেপি নয়, লড়ছেন নরেন্দ্র মোদি

হরিশ কেশওয়ানি গুজরাটি নন। সিন্ধি। কিন্তু জন্ম-কর্ম সবই এই রাজ্যে। কোনো রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই তিনি বললেন, মনে হচ্ছে এবারও এখানে মোদিরই জয়জয়কার।

মোদিই বটে। কেননা, শহরের এখানে-ওখানে হোর্ডিং-পোস্টার, যা নজরে আসে তাতে মোদি ছাড়া আর কারও অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। প্রচারেও। যেন ভোটটা বিজেপি লড়ছে না, লড়ছেন নরেন্দ্র মোদি।

দক্ষিণ গুজরাটের ভারুচ জেলা থেকে আমেদাবাদ চলে এসে হরিশের বাবা শেয়ারের কাজ-কারবার শুরু করেছিলেন বহু বছর আগে। হরিশ অবশ্য বাবার পথ মাড়াননি। নিজের গরজে খুলে ফেলেন ট্রান্সপোর্টের কারবার। গোটা রাজ্য তো বটেই, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান যাতায়াতও তাঁর নিত্যদিনের কাজ।

মোদির জয় এতটা জোর দিয়ে কী করে বলতে পারছেন, সেই প্রশ্নটা ছিল অবধারিত। সেটা আঁচ করেই হাসি হাসি মুখ করে হরিশ বললেন, ‘অনেকগুলো কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কারণ, ১৫ বছর ধরে গুজরাটকে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ রাজ্য হিসেবে মোদিই গড়ে তুলেছেন। ১৫ বছর আগের গুজরাটে বছরে দু-তিনটে দাঙ্গা লেগেই থাকত। এমন কোনো বছর ছিল না যখন ছোট-বড় দাঙ্গা হয়নি। ২০০২ সালের পর গুজরাটে কেউ দাঙ্গা দেখেনি। এই বিশ্বাসটা মানুষের মনে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে গেড়ে বসেছে। গুজরাট এখন শান্তির নীড়।’

‘এই কারণে মুসলমানরাও ক্রমে ক্রমে বিজেপির সমর্থক হয়ে উঠেছে।’ হরিশ তাঁর দ্বিতীয় ব্যাখ্যার শুরু করলেন এভাবে—‘ওরা বুঝেছে, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ওদের ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। তা ছাড়া মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ কখনো ৯০ শতাংশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। এই বোধোদয় ওদের বাস্তববাদী করে তুলেছে।’

আমি বললাম, ‘তার মানে ভয়ে ভক্তি, ভালোবেসে নয়।’

হরিশ কেশওয়ানি মৃদু হাসলেন। বললেন, ‘সে আপনার ব্যাখ্যা। আমি শুধু জয়ের কারণগুলো জানাচ্ছি।’ কথাটা বলে উনি গুজরাটিদের চরিত্র বিশ্লেষণ শুরু করলেন। ‘এই জাতটা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে টাকাকে। কী করে এক শ টাকাকে এক হাজার টাকা করা যায়, এই চিন্তা চব্বিশ ঘণ্টা এদের তাড়িয়ে বেড়ায়। ব্যবসা-বাণিজ্য এদের ধর্ম। ফলে সব সময় তারা একটা স্থিতিশীল সমাজ পছন্দ করে, যেখানে নিশ্চিন্তে ও নির্ভাবনায় কাজকর্ম বা ধান্দাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’

আমি টকিং পয়েন্টটা পেয়ে গেলাম। ‘জিএসটি ও নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কি ওই ধারণার গোড়াতেই কুড়ুলের কোপ মারেনি? এখানে আসার আগে থেকে তো সেই কথাটাই শুনে আসছি? কংগ্রেসের মূল প্রচারটাও তো ওই দুই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে লাট্টুর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে?’

হরিশ মেনে নিলেন, ‘ঠিকই শুনেছেন। বিজেপি যে এত মরিয়া, প্রাইম মিনিস্টারকে যে এভাবে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে তার কারণও ওই। কিন্তু গুজরাটিরা শেষ বিচারে গুজ্জুই। মোদিকে ঠিকই ক্ষমা করে দেবেন স্রেফ জাত্যভিমানের কারণে। গোটা পৃথিবীর কাছে তিনি ভারতকে নতুনভাবে পরিচিত করিয়েছেন।’

অথচ এই ঝলমলে চালচিত্রের বহু চেনা আবহে এক অচেনা সুর ক্রমাগত কু গেয়ে চলেছে। জয় নিয়ে প্রবল বিশ্বাসী হরিশ কেশওয়ানিরাও তা উপেক্ষা করতে পারছেন না। এ রাজ্যে গত ২২ বছরে বিজেপির শাসনে এই প্রথম এতটা প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি শাসক দলকে যারা দাঁড় করিয়েছে, তাদেরই উৎখাত করে ভারত গড়ার ডাক দিয়ে দিল্লি দখল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। অথচ আজ সেই রাহুল গান্ধীই কেড়ে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর যোগ্য সহচর অমিত শাহর ঘুম।