ন্যানো-ফোর্ডে ভাগ্য পাল্টায়নি মানুষের

যা ছিল ‘জনতার গাড়ি’, সেই ‘ন্যানো’কে অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছে প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশ। গুজরাটের ভোটে এটাই বাংলাদেশের একমাত্র ‘কানেক্ট’। অথচ এমনটা হওয়ার কোনো আভাস কিন্তু সেই শুরুর দিনগুলোয় ছিল না।
পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরের ইতিহাস সবার জানা। ন্যানোকে জন্ম দিতে রতন টাটাকে সিঙ্গুরে জলের দরে জমি দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অনিচ্ছুক জমিদাতাদের নিয়ে মমতা ব্যানার্জির তুমুল আন্দোলনে ২০০৮ সালে সিঙ্গুর ছেড়ে রতন টাটা পাড়ি জমান এই গুজরাটে। আমেদাবাদ শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সানন্দ। সেখানে ৩ গ্রামের ১ হাজার ১০০ একর জমি মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রায় বিনা মূল্যে তুলে দেন টাটাদের। গুজরাট শিল্পোন্নয়ন নিগম চুক্তি করে। ১০ বছর পর থেকে নামমাত্র সুদে দীর্ঘ মেয়াদে শোধ দিতে হবে সরকারের পাওনাগণ্ডা।

সেই ১০ বছর আগামী বছর শেষ হবে। অথচ তার আগে থেকেই নাভিশ্বাস উঠে গেছে একলাখি ন্যানোর। যাদের বদান্যতায় এখনো ধুকপুক করে প্রাণের স্পন্দনটুকু শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশ তাদের একজন।
ন্যানোর নাভিশ্বাসের কারণটা প্রথম প্রকাশ্য করেন সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রি। ২০১৬ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণের সময় জানিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার বড় কারণ ন্যানো। একলাখি ন্যানো যে একটা ‘বাজে’ সিদ্ধান্ত ছিল, সাইরাস প্রথম দিন থেকেই তা বলে আসছিলেন। নামে একলাখি হলেও বাজারে তা ছাড়ার আগেই কোম্পানির খরচ-খরচা সোয়া এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। জনতার হাতে যেতে যেতে দেড় লাখেরও বেশি। কথায় আছে, সস্তার তিন অবস্থা।

তিন তিন ছয় লেনের হাইওয়ের পাশে ঢাকঢোল পিটিয়ে গড়ে তোলা টাটা মোটরসের কারখানা এখন প্রায় সুনসান। কর্মী ছাঁটাই হয়নি ঠিকই কিন্তু ন্যানো তৈরি হচ্ছে ঢিমেতালে। আমেদাবাদ কংগ্রেসের সহসভাপতি প্রবীণ অমরসিন সোলাঙ্কি বলেন, যে কারখানার ক্ষমতা ছিল বছরে কুড়ি হাজার ন্যানো তৈরির, তারা ক্রমে ক্রমে তলিয়ে গেল। এখন মাসে যে কটা গাড়ি তৈরি হয়, তার একটাও দেশের কোনো বড় শহরে চলে না। চলে হয় কোনো ছোট শহরে, নয়তো বিদেশে।
ন্যানোর এই করুণ হালের ব্যাখ্যা করে অমরসিন সোলাঙ্কি বলেন, ‘নামে একলাখি হলেও তার দাম পড়ে পৌনে দুই লাখ থেকে সোয়া দুই লাখ টাকা। এর চেয়ে আরেকটু বেশিতে যখন মারুতির “ওয়াগন আর” বা “অল্টো” পাওয়া যায়, তখন কেন মানুষ ন্যানোতে পাগল হবে?’

‘তাহলে বাংলাদেশিরা কিনছে কেন?’
প্রশ্নটির জবাব এড়ালেন না অমরসিন। বললেন, ‘বাংলাদেশে গাড়ির ওপর আমদানি শুল্ক মারাত্মক বেশি। শুনেছি প্রায় ২০০ শতাংশ! কাজেই, জাপান বা কোরিয়া কিংবা জার্মানির নতুন গাড়ির যে দাম ওখানে পড়বে, তা মাত্রাছাড়া। তাই বাংলাদেশের পাশাপাশি ন্যানো যাচ্ছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাতেও।’

যে ন্যানো ছিল ভাইব্রান্ট গুজরাটের অন্যতম বিজ্ঞাপন, তারই দেখাদেখি ওই সানন্দ এলাকায় ফোর্ড গেছে। গেছে আরও ১০ থেকে ১২ বহুজাতিক কোম্পানি। কিন্তু পাঁচ বছর আগে ওই সানন্দ বিধানসভা কেন্দ্রে হেরে যায় বিজেপি। কংগ্রেসের সেই বিধায়ক করমসি প্যাটেল দল বদলে আজ বিজেপিতে। সানন্দে তাঁর ছেলে কানুভাই প্যাটেল বিজেপির প্রার্থী। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বস্তিতে নেই মোদির দল।

কারণটা জানালেন কংগ্রেসের নারী প্রার্থী পুষ্পাবেন দাভি। ‘আশপাশের গ্রামের মানুষ কৃষিজীবী। কারখানা তাঁদের চাকরি দেয় না। কৃষিঋণ মওকুফের দাবিও মানেনি বিজেপি। অথচ কংগ্রেসের ইশতেহারে আমরা তারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’