নানু চৌধুরীর পরিচয়ে পাসপোর্ট বানাল কে?

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক ব্যক্তির নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে পাসপোর্ট বানিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই ব্যক্তি।

ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম মো. নানু চৌধুরী। গত এপ্রিলে তিনি জানতে পারেন, জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে পাসপোর্ট বানিয়ে নিয়েছে কেউ। জালিয়াতির ঘটনাটি হাইকমিশনের তদন্তে ধরা পড়লেও কে ওই পাসপোর্ট বানিয়ে নিয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য হাইকমিশনের কাছে নেই।

এতে নানু চৌধুরীর পরিচয় ব্যবহার করে কে কোন উদ্দেশ্যে ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করছে, তা এখনো জানা যায়নি। ভুয়া পরিচয়ে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কীভাবে বানানো সম্ভব হয়েছে, তা নিয়েও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন নানু চৌধুরী। তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন এবং এমআরপি করার আবেদন আটকে দিয়েছে পাসপোর্ট বিভাগ। যার ফলে তিনি বাংলাদেশে যেতে পারছেন না। পাসপোর্ট জটিলতায় দেশে থাকা স্ত্রীর ভিসার আবেদনও করতে পারছেন না। এ ছাড়া তাঁর যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন থাকলেও পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকায় চাকরি করতে পারছেন না। সাত মাস পার হলেও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

নানু চৌধুরী টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল তিনি তাঁর পুরোনো হাতে লেখা পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেন। তাঁর কাছ থেকে নতুন এমআরপির জন্য আঙুলের ছাপসহ প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নির্ধারিত ফি রাখা হয়। এমআরপি এনরোল নম্বর ‘জিবিআর ১০০০৫৯৬৪৪’। নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর নতুন পাসপোর্ট না আসায় তিনি হাইকমিশনে যোগাযোগ করেন। হাইকমিশন থেকে জানানো হয়, ২০১৪ সালে একই পরিচয় ব্যবহার করে এমআরপি ইস্যু করা হয়েছে। তাই তাঁর আবেদন আটকে দেওয়া হয়েছে। নানু চৌধুরীর দাবি, হাইকমিশনের ভুলের খেসারত তাঁকে গুনতে হচ্ছে।

হাইকমিশনের প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা উইং) আ ফ ম ফজলে রাব্বী গত ২০ সেপ্টেম্বর বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লেখা এক চিঠিতে বর্তমান আবেদনকারী নানু চৌধুরীকে পাসপোর্ট ইস্যু করার সুপারিশ করেন। সুপারিশে বলা হয়, একই নাম ও ব্যক্তিগত তথ্য (কেবল মায়ের নাম ভিন্ন) ব্যবহার করে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর হাতে লেখা পাসপোর্ট ‘সি ০০৮৩ ৫৫৭’-এর বিপরীতে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন থেকে এমআরপি আবেদন ‘জিবিআর ১০০০২৩৪২৭’ এনরোল করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘বিএফ ০২৭২৫৫৮’ নম্বর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। ওই আবেদনকারীর হাতে লেখা পুরোনো পাসপোর্টের (সি ০০৮৩ ৫৫৭) ফটোকপিতে পাসপোর্টটি লন্ডন হাইকমিশনের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়েছে বলে উল্লেখ থাকলেও অনুসন্ধানে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য হাইকমিশনের রেকর্ডে পাওয়া যায়নি। আবেদনকারী নানু চৌধুরীর বর্তমান পাসপোর্টের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই ২০১৪ সালে ইস্যুকৃত ওই পাসপোর্ট (বিএফ ০২৭২৫৫৮) বাতিল করার সুপারিশ করা হয়। সেই সঙ্গে বর্তমান আবেদনকারী নানু চৌধুরীকে পাসপোর্ট ইস্যু করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেওয়া হয়।

এরপর প্রায় আড়াই মাস পার হলেও নানু চৌধুরী নতুন পাসপোর্ট পাননি। ভুয়া পাসপোর্টটি বাতিল করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য হাইকমিশনে নেই।

নানু চৌধুরী বলেন, ‘আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। আমার পাসপোর্ট আটকে রেখে কেন আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’

যোগাযোগ করা হলে হাইকমিশনের প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা উইং) আ ফ ম ফজলে রাব্বী গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি বেশ পুরোনো। তিনি গত মে মাসে দায়িত্বে এসেছেন। বাংলাদেশে মহাপরিচালকের অফিসে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সেখানেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাত মাসেও বিষয়টি সুরাহা না হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দিতে পারেননি তিনি। তবে তিনি স্বীকার করেন, ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে নেওয়ার ঘটনা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।