ব্রেক্সিট বিলে সংশোধনীর পক্ষে ভোট

ব্রেক্সিট বিল পাশে বড় ধরনের হোঁচট খেলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গতকাল বুধবার সংসদে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে এই বিলে একটি সংশোধনী যুক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি। যাতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত যে কোনো চুক্তি বাস্তবায়নের আগে বাধ্যতামূলকভাবে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। ফলে থেরেসা মে সরকারের জন্য স্বাধীনভাবে ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনের সুযোগ আরও সংকুচিত হয়ে গেল।

‘ইইউ উইথড্রোয়াল বিল’ নামে পরিচিত ওই বিলে সংশোধনীটির পক্ষে ভোট দেন ৩০৯ এমপি । আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ৩০৫টি। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ১১ এমপি সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেন। ফলে মাত্র ৫ ভোটের ব্যবধানে হারতে হয় থেরেসা মে কে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পার্লামেন্টে এটা মে’র জন্য প্রথম কোনো হার।

লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন এটিকে সরকারের জন্য লজ্জাজনক পরাজয় উল্লেখ করে বলেছেন, এতে বোঝা যায় সরকার পরিচালনায় মে’র কর্তৃত্ব নেই।

সরকারের বিপক্ষে ভোট দেওয়া কনজারভেটিভ এমপিদের ৮ জনই সাবেক মন্ত্রী। আর সংশোধনী প্রস্তাবটি তোলেন কনজারভেটিভ দলীয় সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ডোমিনিক গ্রিভ। সরকারের বিপক্ষে ভোট দেওয়ায় স্টিফেন হ্যামন্ডকে দলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কনজারভেটিভ দলের ব্রেক্সিটপন্থী ও ব্রেক্সিটবিরোধীদের মধ্যে চলছে নানা উত্তেজনা।

ব্রেক্সিট বিরোধীদের বশে এনে বিলটি পাশ করিয়ে নিতে থেরেসা মে’র সরকার চূড়ান্ত চুক্তির ওপর পার্লামেন্টে ভোটাভুটির সুযোগ দেবে বলে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তাতে আস্থা রাখেননি এমপিরা।

ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলে নানা মত রয়েছেন। এখন বিরোধী মতকে আরও বেশি সমীহ করে ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। তবে সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, এই সংশোধনী ব্রেক্সিট কার্যকরের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না। তবে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন, সংসদে এই হারের ফলে ইইউ’র কাছে থেরেসা’র অবস্থানটা আরও হালকা হয়ে গেল। ব্রেক্সিট নিয়ে সমঝোতা হলেই যে সেটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন জোরালোভাবে সেই নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না মে। এই বিল পাশের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি ‘কঠোর ব্রেক্সিট’র বিপক্ষে।

এমন ভঙ্গুর অবস্থান নিয়েই থেরেসা মে আজ বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইইউ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সেখানে তিনি ইইউ’র বাকি ২৭টি রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তিতে তারা অনুমোদন দেয় এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরুর অনুমোদন দেয়।

দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শুরুর অনুমোদন মিলবে বলে প্রত্যাশা।

ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের বিষয়টি ব্রেক্সিট নামে পরিচিত। এই বিচ্ছেদ কার্যকরের কৌশল চূড়ান্ত করতে ব্রেক্সিট বিল (আনুষ্ঠানিক নাম ইইউ উইথড্রোয়াল বিল) সংসদে তোলে মে সরকার। এই বিলে ইইউ’র সকল আইনগুলোকে যুক্তরাজ্যের অধিভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, যাতে ব্রেক্সিট কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে কোনো বিষয়ে আইনের সংকট না পড়ে। বিলে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাজ্য ইইউ আদালতের অধীনতা ত্যাগ করবে। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ব্রেক্সিট কার্যকর হবে বলে উল্লেখ রয়েছে বিলটিতে।

কনজারভেটিভ দলের বিদ্রোহী এমপিরা এবার বলছেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বাদ দিতে হবে। অন্যথায় আগামী সপ্তাহে থেরেসা মের জন্য আরও একটি পরাজয় অপেক্ষা করছে।