নতুন সম্পর্ক নির্ধারণে আলোচনার অনুমোদন

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদ বিষয়ে করা স্মারকের অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। বিচ্ছেদ-পরবর্তী সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ধারণের লক্ষ্যে আলোচনা শুরুর অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ সম্মেলনের শেষ দিনে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

ব্রেক্সিট নামে পরিচিত এই বিচ্ছেদ কার্যকর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এ অনুমোদনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে ব্রেক্সিট সমঝোতা নিয়ে চলমান আলোচনা দ্বিতীয় ধাপে পাড়ি দিল। আগামী সপ্তাহ থেকেই নতুন সম্পর্ক নির্ধারণের আলোচনা শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। শুরুতে দুই বছরের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ধারণে আলোচনা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইইউর নেতারা।

২০১৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ইইউর সদস্যপদ প্রত্যাহারের পক্ষে রায় দেন। ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়াটি ব্রেক্সিট নামে পরিচিত।

২৮ দেশের এই জোটের সদস্য দেশগুলো মানবাধিকার, পরিবেশ রক্ষা, কৃষি ও পণ্যের মান যাচাইসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব বিষয়ে একই নীতি অনুসরণ করে। নিজেদের মধ্যে শুল্কমুক্ত অবাধ বাণিজ্য করে। জোটবহির্ভূত দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সদস্যরা একই শুল্কনীতি মেনে চলে। জোটের নাগরিকেরা সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে অবাধে চলাচল করতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের পূর্ণ নাগরিক অধিকার ভোগ করে।

যুক্তরাজ্যের এই জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নানা কারণে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করে। যুক্তরাজ্যের চলে যাওয়া ইইউ জোটকে দুর্বল করবে বলে আশঙ্কা। এ ছাড়া এই বিচ্ছেদ সফল হলে জোটের অন্যান্য সদস্যরাও জোট ছাড়তে উৎসাহিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জোটের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়বে। যে কারণে ইইউ যুক্তরাজ্যকে এমন কোনো সুবিধা দিতে চায় না, যা বিচ্ছেদকে উৎসাহিত করে।

কিন্তু যুক্তরাজ্য জোট ছাড়লেও ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। যে কারণে বিচ্ছেদ আলোচনার শুরু থেকে বিচ্ছেদ-পরবর্তী সম্পর্ক নির্ধারণ নিয়ে আলোচনায় মরিয়া যুক্তরাজ্য। কারণ, ইইউর শুল্কমুক্ত বাজারের সুবিধা হারালে তা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা।

ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়, দেনা-পাওনা মিটিয়ে আগে সম্পর্ক গুটিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে হবে, তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা। সর্বশেষ গত সপ্তাহে দুপক্ষ বিচ্ছেদ বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায়। ওই সমঝোতা ইইউ সম্মেলনে অনুমোদন পাওয়ার পর এখন নতুন সম্পর্ক নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত হলো।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এটিকে প্রত্যাশিত বিচ্ছেদের পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছেন।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ ইয়ঙ্কার নতুন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার পর্বটি আরও কঠিনতর হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।