রামাফোসার চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি

দক্ষিণ আফ্রিকার ডেপুটি প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দেশটির বৃহৎ রাজনৈতিক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত সোমবার জোহানেসবার্গে সম্মেলন মঞ্চেই তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান তাঁরই প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মন্ত্রী এনকোসাজানা দলামিনি-জুমা l ছবি: এএফপি
দক্ষিণ আফ্রিকার ডেপুটি প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দেশটির বৃহৎ রাজনৈতিক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত সোমবার জোহানেসবার্গে সম্মেলন মঞ্চেই তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান তাঁরই প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মন্ত্রী এনকোসাজানা দলামিনি-জুমা l ছবি: এএফপি

অবশেষে জ্যাকব জুমার উত্তরসূরি নির্বাচন করল দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস। ২০০৭ সাল থেকে দলের নেতা ছিলেন জুমা। আর দেশটির প্রেসিডেন্ট ২০০৯ সাল থেকে। এবার দুর্নীতি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন দেশের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।

জুমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল বেশ কয়েক বছর থেকে। গত অক্টোবরে আদালত রায় দিয়েছিলেন, জুমাকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর স্থলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলো সোমবার। নতুন নেতা সিরিল রামাফোসা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ। ২০১৯ সালের নির্বাচনে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বিজয়ী হলে প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ৬৫ বছরের রামাফোসা। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ডেপুটি প্রেসিডেন্ট।

দীর্ঘ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সাবেক স্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রী এনকোসাজানা দলামিনি-জুমাকে পরাজিত করে দলটির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন রামাফোসা। তীব্র লড়াইয়ের পর প্রায় ২০০ ভোটের ব্যবধানে জিতে যান তিনি।

দুই প্রার্থীর মধ্যকার নেতৃত্বের তিক্ত লড়াইয়ের কারণে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। জ্যাকব জুমা তাঁর সাবেক স্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছিলেন। রামাফোসার জয়ে এনকোসাজানার সমর্থকেরা খুব বেশি উৎফুল্ল হননি। তবে দলীয় নির্বাচনের ফলের পর মঞ্চে গিয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে শুভেচ্ছা জানান পরাজিত এনকোসাজানা। এ সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

শুরু থেকেই এনকোসাজানার প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হন রামাফোসা। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সমর্থন ছিল রামাফোসার প্রতি। তিনি দলের প্রাদেশিক এলাকা থেকে বেশ সমর্থন পাচ্ছিলেন। ফলে তাঁর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। কিন্তু জুমার বিরাগভাজন হওয়াটাই তাঁর প্রধান বাধা ছিল।

রোববার থেকে দলের নেতা নির্বাচন নিয়ে ভোট প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু নির্বাচনে ফল মেনে নিতে প্রথম দিকে আগ্রহী ছিলেন না এনকোসাজানা। তিনি ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলেছিলেন। ফলে রামাফোসাকে বিজয়ী ঘোষণা করতে দেরি হয়।

দলীয় নির্বাচনের ফলাফলের পর রামাফোসার উল্লসিত সমর্থকেরা জোহানেসবার্গ এবং অন্য শহরগুলোর রাস্তায় নেমে আসেন।

দলের নেতা হলেও নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে রামাফোসাকে। দলীয় নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি নিয়ে বেশ সরব থাকায় তিনি জুমাবিরোধী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত হয়ে পড়েন।

এএফপি জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড ক্যালান্ডের মতে, জুমা যত দিন প্রেসিডেন্ট আছেন তত দিন রাজনৈতিকভাবে বাধার মুখে পড়বেন রামাফোসা। আর ২০১৯ সালে নির্বাচিত হলেও জটিলতা কমবে না। কেননা, জুমার শাসনামলের দুর্নীতির মোকাবিলা করতে হবে তাঁকে।

এখন জুমার দুর্নীতির কারণে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান। এর ফলে আগামী নির্বাচনে জেতাটাও কঠিন হবে রামাফোসার জন্য। আর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুমার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ায়ও সমালোচিত হয়েছেন রামাফোসা।