জাতিসংঘে বরাদ্দ কমাল যুক্তরাষ্ট্র

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো অবস্থান নিলে ‘দেখে নেওয়া হবে’, এই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও জাতিসংঘের বেশির ভাগ সদস্যরাষ্ট্র ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এর পরপরই জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি গত রোববার রাতে জানালেন, আগামী অর্থবছরে জাতিসংঘে অর্থায়ন ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার কমাবে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের বাজেট বরাদ্দে আরও কাটছাঁট করা হবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

গত রোববার জাতিসংঘের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। সদস্যরা আগামী অর্থবছরের জন্য ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট করার বিষয়ে সম্মত হয়। এর পরপরই এক বিবৃতিতে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ কমানোর কথা জানান।

নিকি হ্যালি বলেন, জাতিসংঘের অদক্ষতা ও অপচয়ের কথা কারও অজানা নয়। মার্কিনদের উদারতার সুযোগ নিতে আর দেওয়া হবে না। এ সময় তিনি বিশ্ব সংস্থাটিতে বাজেট বরাদ্দ কমানোর কৃতিত্ব নেন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের বাজেটে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর জাতিসংঘে প্রায় ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার দেয়, যা সংস্থাটির বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতিসংঘের ৫৪০ কোটি ডলারের বাজেটে ১২০ কোটি ডলার দিয়েছিল দেশটি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের পেছনেও সবচেয়ে বড় অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। গত জুনে হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট। তখন যুক্তরাষ্ট্র বাজেটের ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ দিতে রাজি হয়।

 প্রসঙ্গত, জেরুজালেম মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদি—এই তিন ধর্মাবলম্বীর কাছে পবিত্র শহর। ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাজধানী করতে চায়। কিন্তু ১৯৬৭ সাল থেকে তা ইসরায়েলের দখলে আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসের শুরুতে পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। পাশাপাশি তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরানোর কথা বলেন। এতে আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিন্দা এবং মুসলিম বিশ্বে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। এর জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি বাতিলে নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দ্বারস্থ হয় ফিলিস্তিন। সাধারণ পরিষদে ১২৮টি সদস্যরাষ্ট্র এতে সমর্থন জানায়। ৩৫টি সদস্যরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকে। সাধারণ পরিষদে ভোটের আগ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘তারা আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দিক। আমরাও তাদের দেওয়া সহায়তা থেকে যথেষ্ট অর্থ বাঁচাব।’ একইভাবে সতর্ক করেছিলেন নিকি হ্যালিও।

 ইউনাইটেড ন্যাশন মিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ কমানোর মধ্যে সফর ও উপদেষ্টা বাবদ এবং এর পরিচালন ব্যয় বেশি কমানোর কথা বলা হয়েছে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট বরাদ্দ কমানোর ঘোষণার পরদিন সোমবার মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, এতে জরুরি অবস্থায় কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা জাতিসংঘ হারায় কি না, তা নিয়ে তারা শঙ্কিত। আরও বেশি শঙ্কিত জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় বরাদ্দ আরও কমানোর আশঙ্কা নিয়ে। 

 হিউম্যান রাইটস ওয়াচে নিয়োজিত ইউনাইটেড ন্যাশনসের পরিচালক লুই চারবানাল বলেন, জাতিসংঘের দক্ষতা বাড়ানো এবং অপচয় কমানোতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে তা করতে গিয়ে আবার যেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত ও পর্যবেক্ষণের অর্থে ঘাটতি না হয়। অন্যভাবে বলেছে, বিশ্বজুড়ে যেসব শিশু ও নারী-পুরুষকে বাঁচানোর সক্ষমতা জাতিসংঘের রয়েছে, তা যেন এতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।