ট্রাম্পের পরীক্ষা, পুতিনের পাস

শুরু হল নতুন বছর। বিশ্ব রাজনীতিতে এ বছর ঘটতে পারে অনেক কিছু, যা আগে থেকে জানা আছে। এর বাইরেও থাকে সম্ভাবনা-আশঙ্কা। সিএনএন, আলজাজিরা, বিজনেস ইনসাইডার ও দি উইক অবলম্বনে সম্ভাব্য এমন ১০টি বড় ঘটনা নিয়ে লিখেছেন রোকেয়া রহমান
ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্পের পরীক্ষা
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। ক্ষমতার প্রথম বছরে কংগ্রেসে তাঁর সাফল্য বলতে গেলে শূন্য, উল্লেখ্যযোগ্য কোনো আইন করতে পারেননি। কংগ্রেসে নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদেরও বিরাগভাজন হয়েছেন। বছরের শেষ মাসেই আলাবামার সিনেট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী রয় মুরেকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ডাগ জোন্স। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের দিনে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে ডেমোক্র্যাটরা এবং দুটির মধ্যে অন্তত যেকোনো একটি তাদের নিয়ন্ত্রণে যাবে। বিশ্বরাজনীতিও বড় পরীক্ষা নিতে পারে ট্রাম্পের। এর মধ্যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যে বাগ্‌যুদ্ধ গত বছরজুড়ে চলল, নতুন বছরে তা ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

সিরিয়ার তিন বছরের কম বয়সী শিশুরা যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই জানে না l এএফপি
সিরিয়ার তিন বছরের কম বয়সী শিশুরা যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই জানে না l এএফপি


সিরিয়ায় শান্তির প্রত্যাশা
সিরিয়ায় প্রায় সাত বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এ বছর একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে পারে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধীদের এক ছাতার তলে আসার সম্ভাবনা আছে। তবে জাতিগত সংঘাত অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতায় অবশ্য বহাল থাকবেন বাশারই। যদিও এটিই সিরীয় যুদ্ধের পেছনে অন্যতম নেপথ্য কারণ। আইএস ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের স্বঘোষিত খেলাফতের প্রতিটি ইঞ্চি হারিয়েছে গত বছর। তবে সিরিয়া বিষয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের। আর এ ধরনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না বলে মনে হচ্ছে।

ভ্লাদিমির পুতিন
ভ্লাদিমির পুতিন

পুনর্নির্বাচিত হবেন পুতিন
এটা বাজি ধরে বলে দেওয়া যায় যে আগামী মার্চের নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত মাসেই দেশটির অত্যন্ত জনপ্রিয় বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। পুতিনের পুনর্নির্বাচিত হওয়া অবশ্য সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর লাখ লাখ মানুষের জন্য কোনো সুখকর বার্তা নিয়ে আসবে না। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের যুদ্ধ ঝুঁকি কমাতে ওই রাষ্ট্রগুলোকে যাতে ব্যবহার করা যায়, সে জন্য সেগুলোতে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করবেন পুতিন।

হামলা অব্যাহত রাখবে আইএস
জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্বঘোষিত খেলাফতের পতন হয়েছে গত বছর। জঙ্গিগোষ্ঠীটির প্রাণে বেঁচে যাওয়া সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একের পর এক পিছু হটার পর আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ছোট ছোট সন্ত্রাসী দলে রূপ নিয়েছে তারা। সিরিয়া ও ইরাকের প্রায় তিন হাজার আইএস ‘যোদ্ধা’ জীবিত রয়ে গেছে। তারা সেখানে হামলা চালাতে পারে। আবার এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ্বজুড়ে ছোট ছোট হামলাও চালাতে পারে। ২০১৮ সালে ইউরোপই সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়ও আইএসের হামলা বাড়তে পারে।

প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন করবিন
গত জুনের আগাম নির্বাচন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের জন্য ইতিবাচক বার্তা আনেনি। এ ছাড়া ব্রেক্সিটের দেনদরবার নিয়ে তাঁর পক্ষে বেশি দূর এগোনো সম্ভব না-ও হতে পারে। গত মাসে আর্থিক সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক বড় প্রতিষ্ঠান মরগ্যান স্ট্যানলি লিখেছে, ব্রেক্সিটের কারণে ২০১৮ সালে থেরেসা মের সংখ্যালঘু সরকারের পতনের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। ফরচুন ম্যাগাজিন এ বছর ঘটতে পারে এমন বড় ঘটনার তালিকায় রেখেছে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে জায়গা করে নেওয়াকে।

বড় যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া

গত বছরের মতো ২০১৮ সালেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ অব্যাহত রাখবেন। বিশ্বকে নিয়ে যাবেন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। অন্যদিকে, আরও কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে উত্তর কোরিয়া। দেখে মনে হবে, যুদ্ধ আসন্ন। কিন্তু বড় যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না কোনো পক্ষ।

চীনের বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিং
চীনের বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিং

জাপান সাগরে প্রভাব বাড়াতে পারে চীন
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গত বছর চীনের কর্মকাণ্ড স্বস্তিদায়ক ছিল না। চীনা বিমানের অসংখ্য মহড়া ২০১৭ সালজুড়ে জাপানকে বিচলিত করে রেখেছিল। টোকিও যখনই চীনের এই ক্রমবর্ধমান মহড়া ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে, পাল্টা জবাবে বেইজিং বলেছে, ‘এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাও।’ ইতিমধ্যে এই সাগরে বিমানবাহী রণতরি নামিয়েছে চীন। ফলে জাপান সাগরে প্রভাববলয় বাড়ানোর কথা ভাবতে পারে বেইজিং।

বাদশাহ হতে পারেন যুবরাজ বিন সালমান

মোহাম্মদ বিন সালমান
মোহাম্মদ বিন সালমান


সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য ২০১৭ সালটি ছিল যুগান্তকারী এক বছর। ভবিষ্যতে শাসনভার নিতে চলা ৩২ বছর বয়সী এই যুবরাজ কেবল দেশটিতে বদলের হাওয়াই লাগাননি, নজিরবিহীনভাবে সুসংহত করেছেন নিজের ক্ষমতা। ছেলে বিন সালমানের জন্য বাদশাহ সিংহাসন ছেড়ে দেবেন, গত বছরের শেষের দিকে এমন গুঞ্জনও বেশ ছড়িয়েছিল। তাই শিগগিরই সৌদিতে সিংহাসনের পরিবর্তন হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

মেক্সিকোর সহিংসতা ঘনীভূত হতে পারে
গত দুই দশকের মধ্যে গত বছরটা ছিল মেক্সিকোর জন্য সবচেয়ে সংঘাতময়। শেষ দুই মাসের হত্যাকাণ্ডের তথ্য এখনো হাতে আসেনি। তবে প্রথম ১০ মাসে ২৩ হাজার ৯৬৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যা বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। সহিংসতা দমনে অদূর ভবিষ্যতে মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ কী করবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। সব মিলে মেক্সিকো পরিস্থিতি ভালোর চেয়ে আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

আফ্রিকায় উপস্থিতি বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র
নাইজার-মালি সীমান্তে গত অক্টোবরে চার মার্কিন সেনাসদস্যের মৃত্যু হওয়ার পর এই মহাদেশে যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি ছিল, তা ভেবে হতবাক হন অনেক মার্কিন নাগরিক। কিন্তু ৯/১১ হামলার পর থেকে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় হাজার সেনা সেখানে আছে। তারা স্থানীয় বাহিনীগুলোকে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা দেয়। কিন্তু কোনো কারণে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে গেলে মার্কিন বাহিনীর ভূমিকা সামনে চলে আসতে পারে।