বাংলাদেশি কর্মী কমলেও রেমিট্যান্স বেড়েছে

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ। পাশে দূতাবাসের অন্য কর্মকর্তারা
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ। পাশে দূতাবাসের অন্য কর্মকর্তারা

কাতারে বাংলাদেশি কর্মীর আগমন কমলেও রেমিট্যান্সের হার বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০১৭ উদ্‌যাপনে কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর ড. সিরাজুল ইসলাম। ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে দুই হাজার ৪৮১ কোটি টাকা এবং তিন হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় চার হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এই রেমিট্যান্স গত দুই অর্থ বছরের চেয়ে যথাক্রমে ৮৫ ভাগ ও ৩৩ ভাগ বেশি।
‘নিরাপদ অভিবাসন যেখানে, টেকসই উন্নয়ন সেখানে’ স্লোগানে দিনটি পালন করে বাংলাদেশ দূতাবাস। এ উপল‌ক্ষে ২৬ ডিসেম্বর সকালে দূতাবাসে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে অভিবাসী দিবস উপল‌ক্ষে নানা তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরেন দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, অভিবাসী কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ত্যাগ ও অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রতিবছর অভিবাসী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে অভিবাসী কর্মীদের মর্যাদা দেওয়া এবং তাঁদের অধিকার সংরক্ষণের প্রয়াসও নেওয়া হয়।
শ্রম কাউন্সেলর সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, প্রবাসী কর্মীরা নিজেদের ও পরিবারের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও বিশেষ অবদান রাখছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হচ্ছে। দেশের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমেও অভিবাসীরা তাঁদের প্রজ্ঞা, মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরলস কাজ করে বাংলাদেশের সুনাম ও পরিচিতি বৃদ্ধি করছেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমবিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, কাতারে কর্মরত লাখো প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর জন্য দূতাবাস নানা সেবা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে চুক্তিপত্র সত্যায়ন, দূতাবাসে শ্রম বিরোধসম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট বা জিসিসি প্রদান, কর্মীদের আবাসস্থল (লেবার ক্যাম্প) ও কর্মপরিবেশ পরিদর্শন, জেলখানা পরিদর্শন, আটক কর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়া, মৃত ব্যক্তির মরদেহ দেশে পাঠানো, হাসপাতাল পরিদর্শন ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণে নিয়োগকর্তা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ।
এ ছাড়া প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদ‌ক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। বলা হয়, বিদেশে আসার আগে প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণও দেওয়া হচ্ছে।
বিদেশে নিহত প্রবাসী কর্মীর মৃতদেহ দাফন-কাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা এবং তাঁর পরিবারকে এককালীন তিন লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রবাসী কর্মীর অসহায় পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়া এবং প্রবাসী কর্মীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
পাসপোর্ট ও ভিসাসম্পর্কিত প্রথম সচিব নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বাণী পাঠ করে শোনান দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ। সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী কর্মীরা যে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, সেটি মূল্যায়ন করতেই এ দিবস পালন করা হচ্ছে।